সোমালিয়ায় জিম্মি ২৩ নাবিকের মুক্তি নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ২৩ দিন পেরিয়ে গেছে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের। দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা কখন চূড়ান্ত হবে, নাবিকেরা কখন মুক্তি পাচ্ছেন—এ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। তবে জাহাজের মালিকপক্ষ, নৌপ্রশাসন ও নাবিকদের স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সর্বশেষ তথ্য হলো, এখন পর্যন্ত দস্যুদের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। তবে নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার প্রক্রিয়া বেশ অনেকটা এগিয়েছে।
১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ জিম্মি করে সোমালিয়ার দস্যুরা। এরপর জাহাজটির দুই দফা অবস্থান পরিবর্তন করে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জেফল উপকূলে নিয়ে যায় দস্যুরা। জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় জাহাজ থেকে মালিকপক্ষের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ করে দস্যুরা। মূলত জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তির বিষয় নিয়ে এরপরই আলোচনা শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে।
এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি হওয়ার পর থেকে নৌপরিবহন অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর রাখছে। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সমঝোতা নিয়ে আগে দুই পক্ষের (জাহাজমালিক ও দস্যু) যে দূরত্ব ছিল, তা এখন কমে এসেছে। এটুকু বলা যায়, জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি বেশ ভালো।
দস্যুরা সাধারণত বড় অঙ্কের মুক্তিপণের দাবি নিয়েই আলোচনা শুরু করে জিম্মি জাহাজের মালিকের সঙ্গে। মুক্তিপণের অঙ্ক সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে দর–কষাকষি করে মালিকপক্ষ। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কত মুক্তিপণ দাবি করেছে দস্যুরা তা জানা যায়নি। মালিকপক্ষ কখনোই বিষয়টি স্বীকার করে না। ২০১০ সালে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মণি প্রায় চার মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল বলে সে সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। তবে মালিকপক্ষ জাহান মণি জাহাজ ফিরিয়ে আনতে কত মুক্তিপণ পরিশোধ করেছে তা এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি।
মালিকপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জিম্মি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত করতে এখনো আলোচনা চলছে। সমঝোতাও চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। তবে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে।
অভিজ্ঞ দুজন নাবিক প্রথম আলোকে জানান, সমঝোতা হলেও নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। কারণ, সমঝোতার পরের ধাপ হচ্ছে দস্যুদের হাতে অর্থ পৌঁছানো। দস্যুরা মুক্তিপণের অঙ্ক ডলারে নগদ নেয়। কারণ, ব্যাংকব্যবস্থায় এই অর্থ নেওয়া হলে তা আটকে যেতে পারে। আর নগদ ডলার পৌঁছে দিতে হয় জিম্মি জাহাজের আশপাশে সাগরে দস্যুদের নির্ধারিত স্থানে।
মুক্তিপণের অঙ্ক কীভাবে দস্যুদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়, তা জানা যায় ২০১০ সালে জিম্মি হওয়া এমভি জাহান মণি জাহাজ মুক্ত করার ঘটনায়। সেই সময়ে এমভি জাহান মণি জাহাজের নাবিকসহ যে ২৬ জনকে সোমালিয়ার দস্যুরা জিম্মি করেছিল, তার একজন ছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হেলিকপ্টার থেকে দুটি পানিরোধী কার্টন সাগরে ফেলা হয়েছিল। দস্যুরা নৌযান নিয়ে প্যাকেট দুটি জাহাজে নিয়ে আসে। পরদিনই ভোরে দস্যুরা জাহাজটি থেকে নেমে যায়। আমরাও ওই জায়গার কাছাকাছি ওমানের সালালা বন্দরের পথে রওনা হই।’
মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমঝোতার পর বাংলাদেশ থেকে নতুন নাবিকদের একটি দল প্রস্তুত রাখা হবে। জিম্মি জাহাজটি যে দেশের বন্দরে প্রথম পৌঁছাবে, নতুন নাবিকদের সেই দেশের ভিসার জন্য আবেদন করা হবে। আবার জিম্মি জাহাজের নাবিকদেরও ওই দেশের বন্দর হয়ে দেশে ফেরার জন্য ভিসা দরকার হবে। এসব প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি বলে মালিকপক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সমঝোতা চূড়ান্ত হওয়ার পরও জাহাজটি কাছাকাছি বন্দরে নেওয়া পর্যন্ত এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন নাবিকদের স্বার্থ সুরক্ষাকারী সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। তিনি বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সমঝোতার পর মুক্তিপণ পরিশোধ, জাহাজটি কাছাকাছি নিরাপদ বন্দরে নেওয়া পর্যন্ত অনেকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে এখন যেভাবে আলোচনা এগোচ্ছে, তাতে জাহান মণি জাহাজের চেয়ে কম সময়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের মুক্তি মিলতে পারে। যদিও দস্যুদের ওপর মূলত নির্ভর করছে কখন ফিরতে পারবেন জিম্মি নাবিকেরা।