মানুষ যেন ভাবে ভারত ঘনিষ্ঠ বন্ধু: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের প্রথম মতবিনিময়ছবি: প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দিল্লির সরকারের সঙ্গে ঢাকার গত সরকারের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্কের বিষয়ে দূরত্ব রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই দূরত্ব ঘোচাতে কাজ করবে। মানুষ যেন ভাবে ভারত ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটিই গণমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রথম মতবিনিময়।

মতবিনিময়ের শুরুতে ছাত্র–জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এ নিয়ে আমিও বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছি, সেটার সঙ্গে কীভাবে বিরোধ করি। আমি মনে করি, দুই সরকারের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এটা আমরা সবাই জানি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে একটা কথা, মানুষের মাঝে বা মনে যে কতটুকু সোনালি অধ্যায় চলছিল, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমরা চেষ্টা করব যে সম্পর্কটা শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, শুধু সরকারের মধ্যে নয়; দুই দেশের সার্বিক যে অস্তিত্ব, তার মধ্যে মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ যেন ভাবে ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আমরা এটাই চাই। বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাবে ভারত আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা সেদিকে সম্পর্কটাকে নিয়ে যেতে চাই এবং আমরা চাইব ভারত আমাদের সহায়তা করবে। কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রাখতে চাই না।’

বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, যদি কেউ এই সরকারকে এভাবে চিত্রিত করতে চায় যে কোন এক দিকে, এটার কোনো মানে নেই। এই সরকার সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখব, চীনের সঙ্গেও ভালো রাখব। ভারসাম্যমূলক এই সম্পর্ক আমরা বজায় রেখেছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও মসৃণ ও ভালো সম্পর্ক চাই।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, জাতিসংঘ অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটা যতটুকু স্মুথ (সহজ) করা যায়। আমরা সমর্থন হিসেবে অনেকের কাছ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাচ্ছি।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর যেসব উদ্বেগ (কনসার্ন) বিভিন্ন সময়ে ব্যক্ত হয়েছে, বস্তুত সেটা আমাদেরই কনসার্ন। মানবাধিকারের বিষয়ে সরকার বেশ গুরুত্ব দেবে।’

‘সেন্ট মার্টিন নিয়ে অঙ্গীকার করিনি’

‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্ট মার্টিন ও বঙ্গোপসাগর ছেড়ে দেওয়া’—সংক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘আমি এ রকম কোনো অঙ্গীকার করিনি।’ পররাষ্ট্রসচিব মনে করেন, আন্দোলনকারী ছাত্ররাও এমন কোনো অঙ্গীকার করেননি।

ভারতে থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতকে চিঠি দেবে বলে জানান তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ফিরবেন কি না, সেটা তো আমি বলতে পারব না। এটা যদি আইন মন্ত্রণালয় কখনো আমাকে বলে, তাঁকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেয়; আমি (ভারতকে চিঠি) দেব।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টাদের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে। এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি তা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে যত শিগগির সম্ভব আমরা একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাব।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ এসেছে। আমি যদি বলি এমন কিছুই ঘটেনি, এটা বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে না। সহিংসতার কিছু ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। পাশে মুসলমানদের বাড়িতেও আক্রমণ হয়েছে। কারণ, সেটা আসলে ধর্মীয় কারণে (হামলা) নয়, রাজনৈতিক কারণে। এ ধরনের আঘাত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল (সোমবার) সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবেন। আমরা তথ্য চেয়েছি, কোথায় কী নৃশংসতা হয়েছে। আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে প্রত্যেকটি অন্যায়–অনাচারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দল–মত না দেখে বিচারের আওতায় আনা।’

আরও পড়ুন