সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শুরু

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ শুনানি গ্রহণ করেন। আগামীকাল বুধবার শুনানির জন্য পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।

আজ বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের আগামীকালের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার আপিল দুটি শুনানির জন্য দুই নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ করে এবং সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে হাইকোর্ট রায় দেন ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ খালেদা জিয়া পৃথক দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। শুনানি নিয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পাশাপাশি সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা পৃথক আপিল শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী কায়সার কামাল, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলকারী ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

হাইকোর্টের রায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শুনানিতে আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো সেটেলার খালেদা জিয়া নন। তিনি কোনো দায়িত্বেও ছিলেন না। ট্রাস্টের সম্পত্তিতে তাঁর কোনো হস্তক্ষেপ ও সই নেই। রাজনৈতিক হয়রানির জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচন (২০১৮ সাল) থেকে বিরত রাখতে ওই রায় অস্ত্র (টুল) হিসেবে কাজ করেছে। যে অর্থের কথা বলা হয়েছে, তা ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত আছে। এই অর্থের কোনো তসরুপও হয়নি। হাইকোর্টের রায় অনুমাননির্ভর। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে ধারণার ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না।

এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল দেন। তিনটি আপিল ও রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট একসঙ্গে রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ হয়। দুদকের রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হক কামালের আপিল খারিজ করেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর আপিল করেন শরফুদ্দিন আহমেদ, যেটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।