শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও একটি হত্যা মামলা, আদালতে জমা আরও ৪ অভিযোগ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাফাইল ছবি: বাসস

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এর বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি হত্যা মামলার অভিযোগ জমা পড়েছে আদালতে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা রেকর্ড হয়েছে কি না, তা জানাতে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ প্রতিবেদন জমার পর আদালত মামলা গ্রহণের বিষয়ে আদেশ দেবেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ১৬৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪৭টিই হত্যা মামলা। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর নেতৃত্বাধীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

মিরপুরে গুলিতে কিশোর সিয়াম ঘটনাস্থলে মারা যায়

গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সিয়াম সরদার (১৭) নামের এক কিশোরকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। সিয়ামের বাবা সোহাগ সরদার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আজ মামলাটি নথিভুক্ত (রেকর্ড) হয়েছে। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ১৮ জুলাই মিরপুর-১০–এ আবু তালেব স্কুলের সামনে রাত ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা মিছিল করছিল। তখন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালান। এতে সিয়াম সরদারের শরীরে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খানকে আসামি করা হয়েছে।

মাঠা বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান

রাজধানীর মুগদা এলাকায় রশিদুজ্জামান (৪২) নামের এক মাঠা বিক্রেতাকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রশিদুজ্জামানের স্ত্রী মলি খাতুন আজ এ আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। একই সঙ্গে রশিদুজ্জামানের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, সেটি আদালতকে জানানোর জন্য মুগদা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ২০ জুলাই সন্ধ্যার সময় মুগদা এলাকায় মাঠা বিক্রি করছিলেন রশিদুজ্জামান। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও তাঁতী লীগের নেতা–কর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে পুলিশও এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তখন ফুটপাতে বসে মাঠা বিক্রি করা রশিদুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আসামি করা হয়েছে।

মনিরের পেটে গুলি লাগে

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় মনির হোসেন নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৯২ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। মনিরের আত্মীয় ফাহাদ বাদশা বাদী হয়ে আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা নেওয়ার আবেদন করেন। এ–সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য ভাটারা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৯ জুলাই বিকেলে ভাটারায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন মনির হোসেন। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোকজনসহ অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেন। পুলিশ সদস্যরাও এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তখন গুলিবিদ্ধ হন মনির। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোর বাঁধনের চোখে গুলি লাগে

১৫ বছরের কিশোর বাঁধনকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করেছেন তার মা বীথি বেগম। ঢাকার সিএমএম আদালত এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য যাত্রাবাড়ী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরজিতে বলা হয়, ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় দুপুরে বাঁধন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। তখন স্থানীয় যুবলীগ নেতা রুবেলসহ অন্যরা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে থাকেন। তখন বাঁধনের চোখে গুলি লাগে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট মারা যায়।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীরের মাথায় গুলি লাগে

জাহাঙ্গীর মৃধা নামের এক সবজি বিক্রেতাকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন লাইজু খাতুন। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী বড় মাদ্রাসা রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। এ সময় সংঘর্ষ এড়াতে জাহাঙ্গীর যাত্রাবাড়ী থেকে হেঁটে রায়েরবাগের উদ্দেশে রওনা হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও পুলিশ তখন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। সেই গুলি জাহাঙ্গীরের মাথায় লাগে। ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানককে আসামি করা হয়েছে।