দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হয়েও তিনি বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী

মো. শহীদুল আফরোজছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির মামলায় কারাগারে গিয়েছিলেন তিনি। সাময়িক বরখাস্তও হয়েছিলেন। পরে ‘মানবিক বিবেচনায়’ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (সিভিল) পদ ফিরে পান তিনি। এরপর তাঁকে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) করা হয়।

বেবিচকের এই কর্মকর্তার নাম মো. শহীদুল আফরোজ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তিনি।

দুর্নীতির মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে। পরে তাঁকে প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সুপারিশে শহীদুলকে স্বপদে বহাল করা হয়। পরে তিনি বিপুল অর্থ ঘুষ দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হন।

দুর্নীতির মামলা ও প্রধান প্রকৌশলী হওয়া নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ১২ নভেম্বর শহীদুলের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। একবার তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর পরিচয়ে ফোন ধরেন এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যার, ব্যস্ত আছেন।’

পরে শহীদুল ফোন করে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি) দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কোনো পদোন্নতি হয়নি।

এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া একই দিন (১২ নভেম্বর) প্রথম আলোকে বলেন, শিগগির এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে।

দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য জেনারেটর কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালে বেবিচকের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়। মামলায় একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে শহীদুল কারাগারে যান। বেবিচক তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে। শহীদুলসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগপত্র দিলে তা ২০২০ সালের মার্চে গ্রহণ করেন আদালত। পরে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

বেবিচক সূত্র বলছে, একপর্যায়ে শহীদুল জামিনে ছাড়া পান। বেবিচক তাঁকে এক বছর বেতন না বাড়ানোর মতো ‘লঘুদণ্ড’ দিয়ে ২০২১ সালে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি করে। আর দুদকের মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত দেয় বেবিচক। তিনি সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। তারা জানায়, তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।

২০২৩ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৪ তম বৈঠকে ‘মানবিক দিক বিবেচনায়’ শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে স্বপদে বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারে মতামত দেওয়া হয়।

এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) করা হয়।

বেবিচকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মো. আব্দুল মালেকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ গত ২১ জানুয়ারি শেষ হয়। পদটি শূন্য হলে দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি শহীদুলকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ, কোনো কর্মচারীর নামে বিভাগীয় বা ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে তাঁকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির মামলার আসামিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পরিবর্তে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি) দায়িত্ব দিয়ে শহীদুলকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি প্রথমে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করেন। পরে বিপুল অর্থ ঘুষ দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী হন।