পরররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪ মিশনের চিঠি
সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজুন, প্রাণহানি এড়ান
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কয়েক দিনের সংঘাতে প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনায় ঢাকায় অবস্থিত ১৪টি মিশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে চলমান সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজতে ও নতুন করে প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে উৎসাহ দিয়ে যাবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে লেখা এক যৌথ চিঠিতে ১৪টি মিশন এমনটা জানিয়েছে। গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যৌথ চিঠিটি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দূতাবাস।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত চলার সময় বাংলাদেশে টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বুধবার ধ্বংসযজ্ঞ দেখাতে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ওই সব স্থাপনায় নিয়ে যান। ওই দিনই বিদেশি ১৪টি মিশনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে মিশনগুলো সংকট সমাধানের পাশাপাশি আন্দোলন মোকাবিলা ও সংঘাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, আটক ব্যক্তিদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার করা এবং যত দ্রুত সম্ভব সারা দেশে পুরোদমে ইন্টারনেট চালুর অনুরোধ জানিয়েছে।
ঢাকায় অবস্থিত ১৩টি দূতাবাস ও হাইকমিশন এবং ইইউ বলেছে, আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বিশেষ করে বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হতাহত হওয়া এবং সহিংসতা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনায় তারা গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। চলমান সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজতে ও নতুন করে প্রাণহানির ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে অব্যাহত প্রয়াসে বাংলাদেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে তারা উৎসাহ দিয়ে যাবে। এই লক্ষ্য অর্জনে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের সংলাপকে তারা স্বাগত জানিয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২১ জুলাই ঢাকায় বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিদের সার্বিক নানা বিষয় তুলে ধরেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গত রোববারের সেই আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে মিশনগুলো লিখেছে, ‘মিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের জবাবদিহি নিশ্চিতের যে ইঙ্গিত আপনি দিয়েছেন, আমরা তার প্রশংসা করছি।’
বিদেশি মিশনগুলো তাদের চিঠিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতে জড়িত সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের যথাযথ বিচার ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ওপর জোর দিয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে আটক ব্যক্তিদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। তেমনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকারসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখাটিও গুরুত্বপূর্ণ।
আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সব নাগরিকের জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছে মিশনগুলো। ইন্টারনেট না থাকায় ঢাকার বিদেশি মিশনগুলো নিজেদের রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ, কনস্যুলার সেবা দেওয়া এবং নিজেদের কূটনীতিক ও স্থানীয় কর্মীদের নিয়মিত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মিশনগুলো প্রত্যাশা করছে, যত দ্রুত সম্ভব সারা দেশে পুরোপুরি ইন্টারনেট চালু হবে।