অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত: ড. ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে করা প্রশ্নে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পরে ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, তার কোনো সময়সীমা তাঁর কাছে নেই। যে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা সামনের মাসগুলোতে সংস্কার সুপারিশ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারপর নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আছেন। তাঁকে ফেরানো (প্রত্যর্পণ) হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেন হবে না?’
ড. ইউনূস আরও বলেন, অপরাধ করে থাকলে তাঁকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে (প্রত্যর্পণ) এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?’
গতকাল নিউইয়র্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন ড. ইউনূস। সম্মেলনে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আটকে থাকবে, ততক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি কার্যকর হবে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত করার লক্ষ্যে ‘প্যারিস চুক্তি’ করা হয়। বৈশ্বিক এই চুক্তি ২০১৬ সালে কার্যকর হয়।
অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, এই ব্যবস্থা (অর্থনৈতিক ব্যবস্থা) সর্বাধিক মুনাফাকেন্দ্রিক। ব্যবস্থাটি একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য সম্পদ তৈরি করছে। এটি ব্যাপক বর্জ্য উৎপন্ন করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি, তা এই গ্রহ ধ্বংসের মূল।’ ড. ইউনূস বলেন, মানুষ একটি ‘আত্মবিনাশী সভ্যতা’ তৈরি করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, চুক্তিতে যে পরিবর্তনই করা হোক না কেন, বিশ্বের মৌলিক ব্যবস্থাগুলোকে নতুন করে না সাজানো পর্যন্ত তা কোনো পার্থক্য বয়ে আনবে না।
ড. ইউনূস বলেন, ধনী দেশগুলো মাধ্যমে হওয়া জলবায়ুর ক্ষতির বোঝা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বহন করা উচিত নয়।
ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর যেসব ধ্বংসের ভার চাপিয়েছেন, তা কেন আমরা বহন করব?’
ড. ইউনূস বলেন, ‘ক্ষতির কারণ আপনারা, আর ফলাফল ভোগ করছি আমরা।’
‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, অধিকারকর্মী ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিত্বরা যোগ দেন। প্রখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মী জেন গুডাল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা আলী জাইদি, গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলী, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ তেল কোম্পানি অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামের প্রধান নির্বাহী ভিকি হলুব, নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভিয়ানের প্রধান নির্বাহী আর জে স্ক্যারিনজ, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক সংগঠন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কেভিন ডি. রবার্টস প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।