রশীদ করীম পাঠে সমাজের বিবর্তনের ধারা স্পষ্ট হয়

কথাসাহিত্যিক রশীদ করিমের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মফিদুল হক। মঞ্চে রয়েছেন বাঁ থেকে আলতাফ শাহনেওয়াজ, হামিম কামরুল হক ও আনিছুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রেছবি প্রথম আলো

বাংলাদেশের বরেণ্য কথাসাহিত্যিক রশীদ করীমের জন্মশতবর্ষ এ বছর। এ উপলক্ষে শুরু হলো বছরব্যাপী কর্মসূচি। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত ইসলামী পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে গতকাল শনিবার থেকে শুরু হলো এ আয়োজন।

রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটি মিলনায়তনে আলোচনা, স্মৃতিচারণা, রশীদ করীম পাঠ অমনিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হন প্রয়াত রশীদ করীমের একমাত্র সন্তান নাবিলা মুরশেদ। তিনি জানান, বাবার জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগাতে চান তিনি।

আয়োজনের প্রধান অতিথি লেখক ও গবেষক মফিদুল হক বলেন, সমাজ সাহিত্যকে বিচার করে নতুন নতুন মাত্রা পায়। একই সাহিত্য কিন্তু এর বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন তৈরি হয়। উত্তম পুরুষ, আমার যত গ্লানি, প্রসন্ন পাষাণ–এর মতো শক্তিশালী উপন্যাসের লেখক রশীদ করীমের সাহিত্য সে বিবেচনাতেও অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি বলেন, ‘রশীদ করীম ১২টি উপন্যাস লিখেছেন। এর সবগুলো উপন্যাসের কাছেই পাঠককে ফিরে যেতে হয়। রশীদ করীমকে জানলে, বুঝলে বাঙালি সমাজের বিবর্তনের উপলব্ধি ও পথরেখা আমরা পেতে পারি।’

কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক বলেন, রশীদ করীম যেন গদ্য লেখা শামসুর রাহমান। কোনো দিকে না ঝুঁকে তিনি নিজের লেখাটা নিজের মতো করে লিখে গেছেন। রশীদ করীমকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উপন্যাসের আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না। হামীম কামরুল হকের বক্তব্যেও উঠে আসে রশীদ করীমের বাঙালি মুসলমানকে চিত্রিত করার কথা।

কবি ও লেখক আলতাফ শাহনেওয়াজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা জাতীয়তাবাদী বয়ানের মধ্যে আটকে গিয়ে সাহিত্যের অনেক কিছুই অন্বেষণ করতে পারিনি। রশীদ করীমের কাছ থেকে তরুণ লেখকদের লেখা নিয়ে ধৈর্য ধরার বিষয়টিসহ অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বলেন, রশীদ করীম তাঁর বাঙালি মুসলমান আত্মপরিচয়টি উন্মোচন করতে চেয়েছেন সব সময়।

ইসলামী পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আনিছুল ইসলাম জানান, দেশের সব জেলার বিভিন্ন পাঠাগারে রশীদ করীমকে পৌঁছে দেওয়াই হবে শতবর্ষ উপলক্ষে উদ্‌যাপনের বড় কাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পাঠাগার ও পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাদুল ইসলাম। রশীদ করীম অমনিবাস থেকে পাঠ করে শোনানো হয় আয়োজনে।

রশীদ করীমের ভাই আবু রুশদের সন্তান আবু কামালের হাতে সম্মাননা তুলে দেন মফিদুল হক। ১৯২৫ সালে অবিভক্ত বাংলায় জন্মেছিলেন কথাসাহিত্যিক রশীদ করীম। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রশীদ করীম প্রয়াত হন ২০১১ সালে।