ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের কার্যক্রম বন্ধ ও অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদের আদেশ বহাল

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় (ঘটিভাংগা, তাজিয়াকাটা ও হামিদার দিয়া) বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ এবং সেখানে থাকা অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদ করতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা বহাল রয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে মহেশখালীর ছয় ব্যক্তির (লবণচাষি ও উৎপাদক) করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ‘নো অর্ডার’ দিয়ে হাইকোর্টে এ–সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রইল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

এর আগে ‘সংকটাপন্ন সোনাদিয়ায় গাছ কেটে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাছ চাষ’ ও ‘প্যারাবন কেটে আরও চিংড়িঘের তৈরি’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ দুটিসহ গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রহিম উল্লাহ, মহেশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, স্থানীয় তিনজন সাংবাদিক, ছয়জন শিক্ষার্থীসহ মহেশখালীর ১২ বাসিন্দা আবেদনকারী হয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

হাইকোর্ট কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় (ঘটিভাংগা, তাজিয়াকাটা ও হামিদার দিয়া) বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে এবং সেখানে থাকা অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেন। সোনাদিয়া দ্বীপে ম্যানগ্রোভ বীজ বপন করতে নির্দেশের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসে জড়িত দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিবেশসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বনসংরক্ষকসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে মহেশখালীর লবণচাষি ও উৎপাদক ছয় ব্যক্তি আবেদন করেন, যা বৃহস্পতিবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।

আদেশের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ছয় ব্যক্তি আবেদনটি করেন। চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ দেননি। দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকছে এবং সোনাদিয়া দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের কার্যক্রম বন্ধ ও অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদে আইনি বাধা নেই।

অবশ্য ছয় ব্যক্তির আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোনাদিয়া দ্বীপ নয়, বরং আশপাশের এলাকার (ঘটিভাংগা, তাজিয়াকাটা ও হামিদার দিয়া) বিষয় নিয়ে লবণচাষি ও উৎপাদক ছয় ব্যক্তি আবেদনটি করেন। ওই তিন মৌজায় আবেদনকারীদের জমি রয়েছে। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে তারা লবণ ও চিংড়ি চাষ করে আসছেন। তিন মৌজায় লবণ-চিংড়ি চাষের ওপর প্রায় ৫০ হাজার লোক নির্ভরশীল। এ কারণে ছয় ব্যক্তি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করেন।’

রিট আবেদনকারীদের ভাষ্য, সোনাদিয়া দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে সরকার সোনাদিয়া দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সম্প্রতি এই দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় (ঘটিভাংগা, তাজিয়াকাটা ও হামিদার দিয়া) ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করে অবৈধ চিংড়িঘের তৈরির কাজ চলছে বলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখে রিট করেন তাঁরা।