রামুর সংরক্ষিত বনে বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণ বাতিল
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় খুনিয়াপালং সংরক্ষিত বনের ২০ একর জমিতে একটি টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণ করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই বনভূমিকে ডি-রিজার্ভ (অবমুক্ত) ঘোষণাও করা হয়েছিল। আজ রোববার ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিকল্প জায়গা খোঁজার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের একই উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের খুলিরছড়া মৌজায় ওই সেন্টার নির্মাণ করার ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। অংশীজনের পক্ষ থেকে ওই ইউনিয়নের ধলিরছড়া মৌজার ১৯ দশমিক ১ একর জমিতে সেন্টারটি নির্মাণের বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব এম আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ ব্যাপারে একটি চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সচিব ফারহিনা আহমেদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গত ২৮ আগস্ট পাঠানো হয়। এরপর রামুর খুনিয়াপালং বনভূমির সংরক্ষিত বনের প্রশাসনিক সম্মান অবমুক্ত (ডি–রিজার্ভ) বাতিল করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংরক্ষিত বনের বিকল্প কোনো স্থানে বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণের জন্য পরিবেশ উপদেষ্টা যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে পত্র দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, খুনিয়াপালং বনভূমিকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয় ব্রিটিশ শাসনামলে—১৯০৭ সালের ১৫ মে। এরপর ১৯২৭ সালের বন আইনেও ওই জায়গাকে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করা হয়। এ ধরনের বনভূমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণসহ কোনো ধরনের তৎপরতা চালানো নিষেধ। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ছাড়া ওই বনভূমিকে অবমুক্ত বা ডি-রিজার্ভ করা নিষিদ্ধ।
২০২২ সালের ৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বনভূমিকে ডি-রিজার্ভ ঘোষণা করেন। এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বাফুফেকে বনাঞ্চলের ডি-রিজার্ভকৃত অংশটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আবাসিক প্রশিক্ষণ একাডেমির অংশ হিসেবে এখানে দুটি ফুটবল মাঠ, একটি চারতলা ডরমিটরি ও একটি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই নির্মাণের পুরো তহবিল দেবে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।
বন বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দেশের উপকূলীয় বনভূমিগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের রামুর ওই বনভূমি অন্যতম সমৃদ্ধ এবং জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। সেখানে এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, নানা প্রজাতির সাপ ও পাখির বসবাস রয়েছে। এসব প্রাণীর বেশির ভাগই প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের তালিকায় বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত।
অন্যদিকে ৪ হাজার ৭১০ দশমিক ৬৪ একরের সংরক্ষিত এই পাহাড়ি শ্রেণির বনভূমির প্রস্তাবিত স্থানে বিভিন্ন সময়ে বাগান এবং সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণ হলে এশীয় বন্য হাতির বিচরণক্ষেত্র, বন, বন্য প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। এ ছাড়া পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বন বিভাগের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।