১৫৩টি বিদ্যালয়ে পানি, শ্রেণি কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ
টানা চার দিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের ৫০টির বেশি এলাকা ডুবে আছে। থমকে গেছে পানিবন্দী এসব এলাকায় জনজীবন। কোথাও গোড়ালি আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এ অবস্থার মধ্যে গতকাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী পানির জন্য যেতে পারেনি। তাই আজ সোমবার সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শ্রেণি কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, নগরে ১১৩টি প্রাথমিক ও অন্তত ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারী ও রাউজানে অন্তত ১০০টি বিদ্যালয়ের (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ। এসব বিদ্যালয়ের নিচতলায় গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দী হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ের আসতে পারছেন না। গতকাল ও আজ এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল ২ থেকে ৫ শতাংশ।
ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে আজ টানা চতুর্থ দিনের মতো ডুবল দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম নগর। জলাবদ্ধতায় নগরের অন্তত ৪০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট, অলিগলি ও বসতঘর ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকায় নগরের অন্তত ১৫ লাখ মানুষ অসহনীয় কষ্টের শিকার হন। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।
রাতের মধ্যে পানি না কমলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে
চলতি বছরের ৭ মাসে ১০ বার ডুবল চট্টগ্রাম নগর। আগের বছর ডোবে ১২ বার। ভুক্তভোগীদের মতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারের জলাবদ্ধতার ব্যাপকতা ছিল সবচেয়ে বেশি।
পানি ওঠায় নগরের বহদ্দারহাট, হালিশহর, চকবাজার, বাদুরতলা, ঘাসিয়া পাড়া, রাহাত্তারপুল, কে বি আমান আলী সড়ক, চেয়ারম্যান ঘাটা, পতেঙ্গা, আনন্দবাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ আরও ৪০ থেকে ৪৫ এলাকায় পানিবন্দী বাসিন্দারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৫০ মিলিমিটার।
জলাবদ্ধতার কারণে নগরের বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবেছে। তার মধ্যে কাপাসগোলা এলাকায় ডুবেছে চারটি প্রতিষ্ঠান।
কাপাসগোলা সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সলিকা বেগম বলেন, গতকাল পানি ভেঙে বিদ্যালয়ে পাঁচ-সাতজন শিক্ষার্থী এসেছিল। তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষকেরাও ফিরে গেছেন। পুরো নিচতলায় হাঁটুসমান পানি। আজ শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তথ্য সংগ্রহ করে নগরের ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম আজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া হাটহাজারী উপজেলায় ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ।
হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ পারভেজ। তিনি বলেন, গতকাল পানি ভেঙে বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম ছেলেকে। আজ বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তা কমেছে। পানি না কমা পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শিক্ষিকা সাদিয়া তাসনিম বলেন, আগ্রাবাদ সিডিএতে সকাল থেকে কোমরের ওপরে পানি। এ অবস্থায় আজ বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবারই ভোগান্তি কিছুটা কমেছে।
চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা প্রথম আলোকে বলেন, নগরের পতেঙ্গা, বাকলিয়া, বহদ্দারহাটসহ বেশকিছু এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। তালিকা সংগ্রহ হয়নি, তবে ৪০টির মতো বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রাউজান ও হাটহাজারীতেও ৩০টির মতো বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ। রাতের মধ্যে পানি না কমলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।