দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো ‘বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ আয়োজন
বাবা-মেয়ে—অনন্য এক সম্পর্ক। হৃদয়ের গভীরে সম্পর্কটি যত্নে রাখেন দুজনই। তবে নানা কারণে মাঝেমধে৵ ভালোবাসা কিংবা আবেগের কথাটি পরস্পরকে বলা হয়ে ওঠে না। বাবা-মেয়ের অব্যক্ত সেই কথাগুলো প্রকাশ করতে পরস্পরকে চিঠি লেখার উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। ইউএনএফপিএর ‘সেলিব্রেটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের আওতায় ‘কথা হোক’ নামের এই আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো ডটকম।
এই আয়োজনের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাবা-মেয়ের একসঙ্গে গল্প বলা। ‘বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ শিরোনামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গল্পে গল্পে নিজেদের সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট জেলার সফল বাবা–মেয়ে। ঢাকার বাইরের আয়োজনগুলোর খবর—
১. সিলেট: বাবার ভাবনা অনুযায়ী ঐন্দ্রিলা নাথের বেড়ে ওঠা
পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মেয়ে ঐন্দ্রিলা নাথকে স্বশিক্ষিত করেছেন শিক্ষক বাবা সঞ্জয় কুমার নাথ। মেয়ে ঐন্দ্রিলা জানান, বাবা ছিলেন তাঁর বন্ধুর মতো। আর মেয়েকে নিয়ে বাবা জানান, বাবার ভাবনার মতোই বড় হয়েছে নাচ, গান ও অভিনয়ে পারদর্শী মেয়ে ঐন্দ্রিলা। সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বাবা-মেয়ের এই গল্প শোনার আয়োজন।
২. ময়মনসিংহ: মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়ে গর্বিত টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ ও বাবা সনৎ ঘোষ আসেন তাঁদের গল্প শোনাতে। মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়ে গর্ব করেন মেয়ে আর চিকিৎসক মেয়েকে নিয়ে বাবার গর্বের শেষ নেই। অনুষ্ঠানটি হয় ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মঞ্চে।
৩. রাজবাড়ী: ‘আয় খুকু আয়....’ গানে আবেগাপ্লুত সবাই
সমশের আলী খান কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক। তাঁর মেয়ে তানজিলা খান রিম্পি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। তাঁরা এসেছিলেন ‘বাবা-মেয়ের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে। ছেলে নেই, পাঁচ মেয়েকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার গল্প শোনান বাবা। অনুষ্ঠানে ‘আয় খুকু আয়...’ গানে অশ্রুসজল হয় মেয়ে তানজিলাসহ উপস্থিত দর্শকেরা।
৪. বরিশাল: মেয়ের অর্জনে গর্বিত বাবা
প্রথম আলোর বরিশাল কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো নুসরাত জাহান ও তাঁর বাবা দেওয়ান আবদুর রশিদ। বাবা শৈশবে মেয়ের কাছ থেকে দূরে ছিলেন কিন্তু মেয়ের মগজে দিয়েছিলেন মেধা, যোগ্যতা, মননশীলতার বীজ। সেভাবেই বেড়ে উঠেছেন মেয়ে। দুজন শোনালেন সেই গল্প।
৫. খুলনা: শিক্ষকের ভূমিকাই পালন করেছেন সুভাষ চন্দ্র সিংহ
শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র সিংহ ও তাঁর মেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাপলা সিংহ দুজনের গল্প শোনান। বাবা সুভাষ চন্দ্র সিংহ বলেন, ‘শত কষ্ট হলেও সন্তানের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছি। আমি চেয়েছি, তাঁরা মানুষ হোক। আমি যেহেতু শিক্ষক ছিলাম, তাই বাবার চেয়ে শিক্ষকের ভূমিকাই বেশি পালন করেছি।’ আর মেয়ে শাপলা সিংহও জানান বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার কথা।
৬. রংপুর: মেয়েদের প্রগতিশীল মননের বিকাশে আনন্দিত বাবা
প্রথম আলোর রংপুর অফিসে বাবা–মেয়ের গল্প শোনাতে আসেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ আলম ও তাঁর মেয়ে আফিফা ইশরাত। বাবা চেয়েছেন প্রগতিশীল মানসিকতার হয়ে বেড়ে উঠবে মেয়েরা। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বাবার। আর একজন মননশীল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়ার জন্য আফিফা ধন্যবাদ দেন বাবাকে।
৭. চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের গর্ব জাইমা
২৫তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণজয়ী জাইমা এসেছিলেন বাবা মঈনউদ্দিন শহীদকে নিয়ে। মেয়েসন্তান বলে বাবা কখনো বৈষম্য করেননি, তাই পথ চলতে সুবিধা হয়েছে জাইমার। তাই কৃতজ্ঞতা জানান বাবার প্রতি। আর বাবাও জানান, তাঁর কন্যা শুধু নিজের নয়, বাংলাদেশের গর্ব। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাইমা ও তাঁর বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
৮. দিনাজপুর: মেয়েকে নিয়ে গর্ব করেন বাবা নরেশ সরেণ
কাকলি সরেণ ২০২২ সালে ঢাকায় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। ‘বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে মেয়েকে নিয়ে তাই গর্বের কথা জানাতে ভোলেননি বাবা নরেশ সরেণ। আর্থিক দৈনে৵র কারণে মেয়ের জন্য অনেক কিছুই করতে চেয়েও পারেননি। সে কথা শুনিয়ে আশীর্বাদ করেছেন মেয়েকে। আর মেয়ে কাকলী জানান, বাবার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে জীবনে আরও সফল হতে চান।
৯. রাজশাহী: বাবার মুখে নিজের গল্প শুনে কেঁদেছেন মেয়ে
ইরিন ইসতাকের জন্মের সময়ের কাহিনি শুনিয়েছেন বাবা। প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে বাবার কাছে নিজের গল্প শুনে কেঁদেছেন ফুটবলার মেয়ে ইরিন। আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন বাবার জন্য ভালো কিছু করার।
১০. পাবনা: বাবার যত্ন–আদরে বেড়ে ওঠেন সুবর্ণা
সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সুবর্ণা সাহানা জামান এবং বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এসেছিলেন নিজেদের গল্প শোনানোর আয়োজনে। সুবর্ণা জানান, পরিবারে যে শুধু মায়েরাই সেবা করবেন—এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছেন সুবর্ণার বাবা। তাই ধন্যবাদ জানান বাবার প্রতি। আর বাবাও শোনান যত্নে–আদরে মেয়েকে গড়ে তোলার গল্প।
১১. সিরাজগঞ্জ: চিকিৎসক মেয়েকে নিয়ে গর্বিত বাবা
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হেলাল আহমেদ ও তাঁর একমাত্র মেয়ে তরুণ চিকিৎসক সুমনা লায়লা এসেছিলেন ‘বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানের অতিথি হয়েছিলেন। মেয়ে চিকিৎসক হবে—এই স্বপ্ন পূরণ করার কারণে সুমনাকে নিয়ে নিজের গর্বের কথা জানান বাবা। সুমনা বলেন, বাবার চাওয়ামতো চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে।
১২. ব্রাহ্মণবাড়িয়া: মেয়েদের নিয়ে গর্ব করেন বাবা আবদুল হাই
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে অতিথি হিসেবে আসেন বাবা এ কে এম আবদুল হাই এবং তাঁর দুই মেয়ে লুৎফা হাই ও শায়লা হাই। লুৎফা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। আর শায়লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতের আইনজীবী। বাবা আবদুল হাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। লুৎফা ও শায়লা দুজনই জানান, অনেক ব্যস্ততার মধে৵ও তাঁদের জন্য সময় বের করে বাবা তাঁদের গড়ে তুলেছেন। বাবা আবদুল হাই জানান, মেয়েসন্তান বা ছেলেসন্তান তিনি কখনো আলাদা করে দেখেননি।