চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ শর্তে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। আজ বুধবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের পাঁচ শর্তের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজনে যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন বলেও শর্তে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রজ্ঞাপন পেয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব তিনি দায়িত্ব নেবেন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আজ অথবা আগামীকাল সকালের মধ্যে তিনি চট্টগ্রামে পৌঁছাবেন। তখন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের বাড়ি খুলনায়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন। পরে তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু থেকে একই বিষয়ে আবার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকেও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পরে গত বছর অক্টোবরে তিনি অবসরে যান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছিল শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এর ফলে আজ বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম। প্রজ্ঞাপন জারির পরও আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সকাল ১০টায় দেখা যায়, ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টসংলগ্ন মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক, ২ নম্বর নম্বর গেটে তালা ঝুলছে। এর ফলে কোনো পরিবহন ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পারছে না। কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিও দেখা যায়নি। তবে উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর বেলা আড়াইটার দিকে তালা খুলে দিয়েছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে কর্মসূচিতে থাকা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সৈয়ব আহমেদ সিয়াম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের ফোন পাওয়ার পর তাঁরা তালা খুলে দিয়েছেন। তবে সহ–উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। ফ্যাসিবাদের কোনো দোসর সহ–উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, এটা তাঁরা চান না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। ওই দিন থেকেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এর ফলে আটকে যায় বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষাও। পরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আবার নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিন্ডিকেট। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন উপাচার্য, দুই সহ–উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল বডির ১০ সদস্য ও ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ।