‘কী যে অবস্থা গেছে কাল, বোঝাতে পারব না’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালফাইল ছবি: প্রথম আলো

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হচ্ছিল গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে। তাঁদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল চিকিৎসক-নার্সদের।

সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছিল হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের ওপর। কারণ, বেশির ভাগ রোগীকেই প্রথমে সেখানে পাঠানো হচ্ছিল।

আজ বুধবার সকালে কথা হয় ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক প্রান্ত বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী যে অবস্থা গেছে কাল, সেটা বোঝাতে পারব না। চারদিকে কেবল রোগী আর রোগী। চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কাউকে নিউরো সার্জারি বিভাগে, আবার কাউকে অর্থোপেডিকসসহ বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হয়।’

গতকাল আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধু, স্বজনসহ অনেক উৎসুক মানুষও হাসপাতালে ভিড় করেছিলেন। তাঁদের সামলাতেও বেগ পেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

গতকাল বিকেলে নগরের মুরাদপুর ও শুলকবহর এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৭৮ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এখন মোট ১২ জন এখানে ভর্তি আছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। তাঁদের মধ্যে একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দিন বলেন, ভর্তি থাকা ১২ জনই ভালো আছেন। আর যিনি আইসিইউতে আছেন, তাঁর অবস্থাও উন্নতির দিকে।

ক্যাজুয়ালটি বিভাগে এখন দুজন ভর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন মো. আকাশ (১৮)। তিনি পথচারী। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি এখানে ভর্তি হন। আজ সকালে দেখা যায়, তাঁর নাকে খাবারের নল লাগানো। স্যালাইন চলছে। তাঁকে আরও কয়েক দিন চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানান চিকিৎসক।

অপর জনের নাম মো. তানিম হোসেন (১৮)। তিনি একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়েন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে আহত হন। তাঁর ডান পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। আজ সকালে তাঁর ড্রেসিং চলছিল। তখন তাঁর এক স্বজন বলেন, তানিম গতকালের চেয়ে ভালো আছেন।

গতকাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ড ও নিউরো সার্জারি বিভাগ থেকে বারবার আহত ব্যক্তিদের চিৎকার ও কান্না শোনা যাচ্ছিল। এ ছাড়া গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত তিনজনের স্বজনেরাও আহাজারি করছিলেন।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় যে মেঝে, শয্যাসহ সবখানে রোগী আর রোগী। চিকিৎসক-নার্সরা তাঁদের সেবা দিচ্ছিলেন। দু-একজনকে ওয়ার্ডের অস্ত্রোপচারকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন পটিয়া থেকে আসা কলেজছাত্র ইরফান। তিনি হাত ও মাথায় আঘাত পান। তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। অনেকে নিজেদের পরিচয় দিতে অনীহা দেখান।

ইমাম ফখরুদ্দিন নামের এক কিশোর মারধরের শিকার হয়। তার বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়। তার মাথা ফেটে যায়। ইমাম বলে, সে শহরে এসেছিল এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে। পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে মারধর করা হয়।

গতকাল নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের দুই ছাত্র ইকবাল ও পারভেজ। তাঁদের চারতলার ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহিদ হাসান। গতকাল রাতে ইকবাল ও পারভেজকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওয়ার্ডটিতে কথা হয় চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ইরফানুল আলমের সঙ্গে। তিনি মাথায় আঘাত পান। ইরফান বলেন, তাঁকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল।