২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়
মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিলের আংশিক শুনানি হয়েছে। অবকাশকালীন ছুটি শেষে শুনানির দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ২০তম বার্ষিকী আজ। ওই ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিল এখন হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ-সংক্রান্ত হত্যা মামলায় হাইকোর্টে আংশিক শুনানি হয়েছে। পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শুরুর পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর আরজির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ আগস্ট হাইকোর্ট শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন অবকাশকালীন ছুটির দুই সপ্তাহ পর। সুপ্রিম কোর্টের বর্ষপঞ্জি অনুসারে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ অক্টোবরের পর্যন্ত অবকাশকালীন ছুটি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলটির নেতা-কর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মী।
ওই হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত মামলা দুটির রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালে এটি হাইকোর্টে ডেথরেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই মামলায় পৃথক জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন। হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি শুরু করে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, দ্বৈত বেঞ্চের একজন বিচারপতি পরিবর্তন হয়েছে। গত রোববার আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অবকাশকালীন ছুটি শেষে খোলার পর শুনানির জন্য রেখেছেন।
এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ বেশ কয়েকজন দণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। পরবর্তী সময়ে কারফিউ ও সাধারণ ছুটির মধ্যে আদালতের কার্যক্রম চলেনি। বিষয়টি আংশিক শ্রুত হিসেবে ছিল। গত রোববার হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়। তখন দেখা যায়, দ্বৈত বেঞ্চের দ্বিতীয় বিচারপতি পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, অবকাশ শেষে আদালত খোলার পর স্বাভাবিকভাবে শুনানি হওয়ার কথা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২১ আগস্টের সেই ভয়ংকর গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নানা তৎপরতা চালায় অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুন করে তদন্ত শুরু করে।
২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) রায় দেন। রায়ের পর একই বছর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌছে, যা সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।