মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা
ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলে ভ্রমণে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণের জন্য খরচ হবে ১০০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা।
আজ মঙ্গলবার সকালে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যেসব যাত্রী সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড ব্যবহার করবেন, তাঁদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কী হারে ভাড়া আদায় করা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রী।
আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই অংশে স্টেশন রয়েছে নয়টি। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আগামী বছরের শেষে চালুর পরিকল্পনা আছে। এই অংশে স্টেশন রয়েছে সাতটি।
মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কিনতে হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা মেশিনেও কার্ড রিচার্জ করা যাবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী বের হতে পারবেন না।
আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে।
বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হয়, তবে বাংলাদেশে ডিএমটিসিএল নিজেই পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিচালনার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবে ডিএমটিসিএল।
মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় কনকোর্স হল। এখানে টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি থাকবে। তিনতলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হলে মেট্রোরেল ভোরে দুই দিক থেকে যাত্রা করবে। প্রাথমিকভাবে রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। শুরুতে ১০ মিনিট অন্তর মেট্রোরেল চলবে। পর্যায়ক্রমে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সময়ের পার্থক্য কমে আসবে। চূড়ান্তভাবে প্রতি তিন মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলার কথা রয়েছে। শুরুতে দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রকল্প সূত্র বলছে, একটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে সরকার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল চালুর কথা জানালেও শুরুতে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের জুনে মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
প্রথম দিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ বিভিন্ন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এর জন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। তারা ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা দিচ্ছে। সরকার খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।