আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধ ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আইনজীবী হত্যাসহ সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। আজ সোমবার বিকেলে সমিতির মিলনায়তনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনেক নেতার জামিন নামঞ্জুর হয়ে কারাগারে গেছেন। কিন্তু তাঁদের অনুসারীরা কেউ প্রিজন ভ্যান আটকে রাখেননি। চিন্ময় দাসের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে রাখেন। ওই সময় হ্যান্ড মাইকে অনুসারীদের উদ্দেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন চিন্ময় দাস। উসকানির কারণে আইনজীবীদের কক্ষ, গাড়ি ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাই চিন্ময় দাসকে আইনজীবী হত্যাসহ সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে হবে। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ করতে হবে ইসকন।
এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘সাইফুল হত্যাকারীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা না করার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করা হয়েছে। সমিতির কেউ আসামিপক্ষে লড়াই করলে তা হবে সাইফুলের রক্তের সঙ্গে বেইমানির শামিল। তবে আসামিপক্ষে বাইরের আইনজীবী দাঁড়ালে বাধা দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত কোনো আইনজীবীকে বাধা দেওয়া হয়নি। সেদিন চিন্ময়ের জামিন শুনানির দিন আদালত বারবার ডেকেও তাঁর কোনো আইনজীবীকে পাননি। আমরা কাউকে আসতে বাধা দিইনি। সব অপপ্রচার। কোনো আইনজীবী আদালত চত্বরে হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আসতে পারছেন না, এমন কোনো অভিযোগ সমিতিতে করেননি।’
চিন্ময়ের আইনজীবীসহ দুজন আইনজীবী হামলার শিকার হয়েছেন বলে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার প্রসঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করছে। সেখানে আমাদের আইনজীবী সমিতির সদস্য রিগান আচার্য ও শুভাশীষ শর্মার ছবি এডিট করে জঘন্য মিথ্যাচার করা হয়েছে।’
আদালত প্রাঙ্গণে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুস সাত্তারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী। এ সময় তিনি ১১টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব ইসকন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা। চিন্ময় দাসকে আইনজীবী হত্যাসহ সব মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। আইনজীবীদের কক্ষ, গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা। ঘটনার দিন আদালতের নিরাপত্তায় থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় জড়িত ব্যক্তিদের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ। হত্যাকাণ্ডটি যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে সব ধরনের অপপ্রচার ও চক্রান্ত থেকে বিরত থাকা। সাইফুলের পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার, আদালতের নিরাপত্তা জোরদার, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন, আদালত অঙ্গনের দীর্ঘকালের সম্প্রীতি বজায় রাখা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল কাদের, সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান খান, সহসাধারণ সম্পাদক কাশেম কামাল, অর্থসম্পাদক কাজী আশরাফুল হক আনসারী, পাঠাগার সম্পাদক আহমেদ কবির, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারুফ মো. নাজেবুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক হাবিবুর রহমান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক অভিজিত ঘোষ, সদস্য শাহ ইমতিয়াজ রেজা চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল ফাহাদ প্রমুখ।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। ২ ২ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির জন্য ওকালতনামা দিলে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব, আর তাঁকে পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ২৫ থেকে ৩০ জন ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী।