ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১০১৩ জন নিহত: এইচআরএসএস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১৩ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।
আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) ২০২৪ সালের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। দেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং নিজের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটি এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯১৪ জনের নাম জানা গেছে। আর ৮১৬ জনের বয়স জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ১৩৬ ও তরুণ ৪৫০ জন। এ ছাড়া ৭০০ জনের পেশা জানা গেছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী ২৭৯ জন। আর ৮৮৫ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে জানা গেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৬৭১ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জুলাই ও আগস্টে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়নে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত-নিহত হন। শুধু তা–ই নয়, আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে এবং দেশে জরুরি অবস্থা চালু করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এ সময় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যান। পরে দেশজুড়ে ব্যাপক লুটপাট, অরাজকতা, বাড়িঘর ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণপিটুনি, লাঞ্ছনা, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে থাকে। এমন অবস্থায় ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও দেশজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
গণ–অভ্যুত্থান ছাড়াও চলতি বছরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, ২০২৪ সালের নির্বাচনী সহিংসতার অন্তত ৭৮১টি ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪৩ জন নিহত ও ২ হাজার ৫৩৮ জন আহত হন। আর বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৭ জন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩০৮টি। এসব ঘটনায় নিহত হন ১০ সাংবাদিক। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জন নিহত হন।
অন্যদিকে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২০১টি। এতে ১৭৩ জন নিহত হন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ৯ গৃহকর্মীর। আর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ২৬ জন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ২৫ জন। এ ছাড়া এ বছর ১ হাজার ৪৯৮ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৫৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ১১ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন আর পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩১৯ জন।