চেক প্রত্যাখ্যান নিয়ে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টে (এনআই অ্যাক্ট) করা মামলাগুলোর কার্যক্রম উচ্চ আদালতের অনুমতি ছাড়া না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি লিমিটেডের পক্ষে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর একক কোম্পানি বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মে মামলাগুলোর কার্যক্রম চলবে বলছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ ও পরিচালক শামীমা নাসরিন গত বছরের ডিসেম্বরে আবেদনটি করেন। সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় তখন ইভ্যালি ও প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্ট চার শতাধিক মামলা ছিল।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তানভীর হোসেন খান। ইভ্যালির গ্রাহক ফরহাদ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল।
প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ইভ্যালির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে রাসেল কারাগারে আছেন। শামীমা গত বছরের ৬ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পান।
অন্যদিকে ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার দিয়ে অর্থ পরিশোধের পর পণ্য ও অর্থ ফেরত না পেয়ে মো. ফরহাদ হোসেন নামের ইভ্যালির এক গ্রাহক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালি অবসায়ন (বিলুপ্তি) চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় একই বছরের ১৮ অক্টোবর আদালত ইভ্যালি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেন। পরবর্তী সময়ে রাসেলের শ্বশুর, শাশুড়ি ও এক আত্মীয় আদালতে উপস্থিত হয়ে রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমার শেয়ার নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে হাইকোর্ট তাঁদের শেয়ার হস্তান্তরে স্বাধীনতা রয়েছে বলে আদেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুসারে গঠিত পরিচলনা পর্ষদের সদস্যরা পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া এক আদেশ অনুসারে শামীমা নাসরিন, তাঁর মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
আদেশের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী তাপস কান্তি বল প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন খারিজ হওয়ার ফলে ইভ্যালি ও এর কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের করা চেক প্রত্যাখ্যানের মামলাগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে।
মামুনুর রশীদ ও শামীমার অন্যতম আইনজীবী তানভীর হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলায় এনআই অ্যাক্টে ইভ্যালির বিরুদ্ধে চার শতাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলার কারণে ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিভিন্ন জেলায় যেতে হচ্ছে। ফলে তাঁরা ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না। তাঁরা ব্যবসা করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে চান। তাই উচ্চ আদালতের অনুমতি ছাড়া এনআই অ্যাক্টে ইভ্যালি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর কার্যক্রম যেন পরিচালনা না করা হয়, সে জন্য আইনসচিব, দেশের সব জেলা ও দায়রা জজের পাশাপাশি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে ওই আবেদন করা হয়।’