ধর্ষণের শিকার শিশুটি হাসপাতালে পৃথক শয্যা পেয়েছে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ধর্ষণের শিকার ৯ বছর বয়সী শিশুটির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলাদা শয্যার (পেয়িং বেড) ব্যবস্থা করেছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত একই বিছানায় আরেক শিশু রোগী থাকায় পা সোজা করার উপায় ছিল না তার। এদিকে শিশুটির জন্য আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি।
গতকাল শুক্রবার ‘ধর্ষণের শিকার শিশুটির অবস্থা ভয়াবহ’ এ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ধর্ষণে শিশুটির মাসিক ও মল ত্যাগের রাস্তা এক হয়ে গেছে। এখন প্রস্রাব করার জন্য লাগানো হয়েছে ক্যাথেটার। শিশুটির পেটের পাশে মল বের করার রাস্তা তৈরি করে সেখানে একটি ব্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যাগেই মল জমা হবে। তিন মাসের মধ্যে এ ব্যাগ খুলে দেওয়া হবে।
ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা রাজধানীতে রিকশা চালান। মেয়ের এ ঘটনায় তিনি বনানী থানায় ১৪ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০২০-এ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১২ অক্টোবর রাতে মেয়েটি বাসার কাছে একটি স্থানে গিয়েছিল। ঘরে ফিরে না আসায় মা-বাবা মেয়েকে খুঁজতে বের হন। তাঁরা রাতে মেয়েকে খুঁজে পাননি। পরের দিন সকালে মেয়ে একাই বাসায় ফিরে আসে। তখন মেয়ে জানায়, এক লোক তাকে একটি ব্যাগ দেখে রাখতে বলেছিলেন। পরে লোকটি বলেন, ব্যাগটি তাঁর বাসায় পৌঁছে দিলে তাকে ২০০ টাকা দেবে। বাসায় নিয়ে লোকটি তাকে ধর্ষণ করেন। পরে লোকটি তাকে বাসায় ফেরার জন্য বাসে তুলে দেন। লোকটি কে, তিনি মেয়েটিকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন, এসব তথ্য সে (মেয়ে) জানাতে পারেনি।
আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শয্যার সংকটের কারণে অস্ত্রোপচার করা শিশু রোগীদের প্রায় সবাইকে অন্য একজন বা দুজনের সঙ্গে বিছানা ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি যখন ভর্তি হয়, তখনো তাকে অন্য দুজন রোগীর সঙ্গে এক বিছানা থাকতে হয়েছে। পরে একজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আজ মেয়েটির জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। শিশুটির প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপচার করে তা পুনর্গঠন করা হবে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
এদিকে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। শুক্রবার রাতে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান।
আজ রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আনা হয়। তখন তিনি মেয়েটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য সার্বিক দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন। মেয়েটির পরিবারকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির জন্য পেয়িং বেডসহ অন্যান্য খাতে যে খরচ হবে, তা–ও দেওয়া হবে।