ধর্ষণকারীর সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধের দাবি
ধর্ষণকারীর সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটি বলেছে, এ ধরনের বিয়ে নারীর জন্য মর্যাদাকর নয়। নারীর নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়ে। এ ছাড়া আইনেও এ ধরনের বিয়ের বিধান নেই।
আজ শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এবারের প্রতিরোধ পক্ষের প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২ হাজার ৫৭৫টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ৪৩৩ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭টি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। আইনের বিধানে এ ধরনের বিয়ে দিয়ে সমাধানের কথা বলা নেই। এতে নারীর আত্মমর্যাদার ওপরে আঘাত আসে, তাঁর নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকার রক্ষায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ধর্ষণের ঘটনাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ও নানা হতাশাজনক অবস্থার কারণে কিশোর–কিশোরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন ফওজিয়া মোসলেম। এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং সেবার পরিধি বাড়ানোর ওপর জোর দেন। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ অন্যতম ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংস্থার লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, উন্নয়ন সংগঠন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন এবং নারী আন্দোলন বহুমাত্রিক কাজ করলেও নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে বাড়ছে বর্বরতার ধরন। এখন অনলাইন যোগাযোগমাধ্যমে ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাতের কারণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এসব পরিস্থিতির উত্তরণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ‘সমন্বিত বিনিয়োগ’ অপরিহার্য। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ, সহিংসতার কারণ নির্ণয় এবং এর আলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রেখা চৌধুরী ও শাহানা কবির, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কর্মসূচি কর্মকর্তা (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার।