ছয় মাস বয়সে মারা যায় বাবা, এবার লরিচাপায় মাকে হারাল শিশু ফাতেমা

মুঠোফোনে মায়ের ছবি দেখাচ্ছে শিশু ফাতেমা। গতকাল বিকেলে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বাসাভর্তি মানুষ। সবারই নজর শিশু ফাতেমার (১০) দিকে। খালাতো বোন উজ্জ্বলার পাশে বসে খেলছে শিশুটি। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেই হাসিমুখে দিচ্ছে উত্তর। শিশুটি জানেই না তার মা নাজমা আক্তারের (৩৫) মৃত্যুর কথা। গত বৃহস্পতিবার লরিচাপায় মৃত্যু হয় নাজমার।

আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামে খালার বাসায় গিয়ে দেখা মেলে শিশু ফাতেমার। তখনো তার মা নাজমার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।

নিহত নাজমার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার তাতিয়ত গ্রামে। তাঁর স্বামীর নাম মো. আহাদুর রহমান। শিশু ফাতেমা জন্মের ৬ মাস পর ২০১৪ সালে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় আহাদুরের। স্বামীর মৃত্যুর পর নাজমা আক্তার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চলে আসেন। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে ফাতেমা ছোট। বড় মেয়ে মুক্তা আক্তারকে দিনাজপুরে বিয়ে দিয়েছেন।

খালার বাসায় গিয়ে ফাতেমার কাছে তার মা কোথায় জানতে চাইলেই ফাতেমা বলে, তার মা অসুস্থ। তাই হাসপাতালে আছে। সে তার আপুর (উজ্জ্বলার) সঙ্গে থাকবে।

ফাতেমার খালাতো বোন উজ্জ্বলা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর খালু আহাদুর রহমান রাজমিস্ত্রি ছিলেন। ২০১৪ সালে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে তাঁর খালা নাজমা আক্তার সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে চলে আসেন। দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন নাজমা। পাশাপাশি সড়কে থাকা লোহার টুকরা কুড়িয়ে বিক্রি করে আয় করতেন। সীতাকুণ্ডে থাকতেই বড় মেয়েকে বিয়ে দেন তিনি।

উজ্জ্বলা আরও বলেন, যখন তাঁর খালা কাজে যেতেন, তখন ফাতেমাকে তাঁদের ঘরে রেখে যেতেন। ফাতেমাকে একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে পরে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার খালার কাজ ছিল না। তিনি লোহা কুড়াতে বের হয়েছিলেন। দুপুরের দিকে শুনি, খালা সোনাইছড়ির চৌধুরী ঘাটা এলাকায় লরিচাপায় মারা গেছেন। সেখানে লাশ আনতে গিয়েছিলাম। তবে এর আগেই পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।’

ফাতেমা কার কাছে থাকবে জানতে চাইলে উজ্জ্বলা বলেন, তাঁরাও দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। কষ্ট হলেও নিজেদের কাছে রেখেই খালাতো বোনকে লালনপালন করবেন।

ফাতেমাকে দেখতে উজ্জ্বলাদের বাসায় উপস্থিত ছিলেন প্রতিবেশী সালেহা বেগম। তিনি বলেন, ‘অবুঝ শিশুটির দিকে তাকাতেই বুক ফেটে যাচ্ছে। নিজের অজান্তে কান্না আসছে। এত ছোট বয়সে মেয়েটি মা–বাবা দুজনকেই হারাল।’

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর নাজমার স্বজনেরা মামলা করতে চাননি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।