বিচারহীনতার সংস্কৃতি চললে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ হবে না: আলী ইমাম মজুমদার
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যাঁরা সাম্প্রদায়িক হামলা করছেন, তাঁরা ধর্মীয় গোষ্ঠী নাকি কোনো দলের সুবিধাবাদী লোক, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা যাবে না।
আজ রোববার দুপুরে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এক সভায় আলী ইমাম মজুমদার এসব কথা বলেন। ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: নাগরিক প্রতিবাদ’ শীর্ষক সভাটির আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে অন্যতম আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো খতিয়ে দেখা দরকার উল্লেখ করে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘কক্সবাজারের রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় কত মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলা কেন ব্যর্থ হলো? কিন্তু ঘটনা যারা ঘটাল, কারও শাস্তি হয়েছে, এমন কথা শুনিনি। যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা কি ধর্মীয় গোষ্ঠী নাকি বিভিন্ন দলের সুবিধাবাদী লোক, এই জিনিসগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।’
গত বছর দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটল, তার এখনো চার্জশিট হয়নি। তাহলে বিচার হবে কবে, সাক্ষী পাওয়া যাবে কবে, আসামি কবে গ্রেপ্তার হবে—এমন প্রশ্ন রেখে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সমাজে সচেতনতা ও সহমর্মিতা বাড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমানো যাবে, এটা সত্য। কিন্তু বিচারহীনতার সংস্কৃতি যদি চলতে থাকে, তাহলে এটা বন্ধ করা যাবে না।
ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা গেলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘ভোটই তো নাই। ভোটের রাজনীতি যদি ফিরিয়ে আনি, তাহলে জবাবদিহির একটি স্তর পাওয়া যাবে। আজ যে সংসদ সদস্য বলছেন, আমার হাত-পা বাঁধা, তখন তিনি বলতে পারবেন না। কারণ, তাঁকে ভোটের জন্য জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং সেটাকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাকে জবাবদিহির একটি স্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা কিন্তু সেটা করছি না।’
সাম্প্রদায়িক হামলার পর সরকার ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রশাসনে সাম্প্রদায়িক মানুষ রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বলা হচ্ছে, প্রশাসনের ভেতরে ভিন্নমতাবলম্বীতে ভর্তি হয়ে গেছে। সরকারি দলের দায়িত্বশীলরাও বলছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরাও বলছেন। তাহলে এগুলো ঢুকে পড়ে কীভাবে? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে যাদের আমরা এই সনদ দিচ্ছি, তা সঠিক হচ্ছে কি না, এটাও চিন্তা করা দরকার।’
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং সঞ্চালনা করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, অভিনেতা মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, একশনএইডের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, আইনজীবী সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, চাকমা রানি ও মানবাধিকারকর্মী য়েন য়েন, ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবনাথ, নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ভুক্তভোগী হ্যামলেট সাহা প্রমুখ।