গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি অভিজ্ঞতায় সাহসী সাংবাদিকতার অঙ্গীকার

প্রথম আলোর এবারে বর্ষপূর্তির স্লোগান ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করেই বর্ষপূর্তির স্লোগানসহ সব কর্মসূচি সাজানো হয়েছে।

‘জেগেছে বাংলাদেশ’ স্লোগানসংবলিত ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রথম আলোর কর্মীরা। প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

জুলাইয়ের রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের কঠিন দিনগুলোয় সাহস, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়েছে প্রথম আলো। সামনের দিনগুলোয় এই স্মৃতি ও অভিজ্ঞতায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সাংবাদিকতা করার অঙ্গীকার জানালেন প্রথম আলোর কর্মীরা। আজ সোমবার দেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলোর ২৬তম বর্ষপূর্তির আনন্দঘন কর্মী সম্মেলনে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন সবাই।

প্রথম আলোর এবারে বর্ষপূর্তির স্লোগান ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করেই বর্ষপূর্তির স্লোগানসহ সব কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। আজ ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছিল কর্মী সম্মেলন।

এক বিশেষ দিন

প্রথম আলোর কর্মীদের জন্য এই দিনটি খুবই বিশেষ। সারা দেশ থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিসহ কর্মীরা এতে অংশ নেন। পোশাক–আশাকও থাকে প্রায় একই রকম, ফলে একাত্মতার বোধও বেশ নিবিড় হয়ে ওঠে। সকালে প্রাতরাশের পরে নিজের মধ্যে আলাপচারিতা, পেরিয়ে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণা, সামনের কর্মপরিকল্পনা, নতুন আশা–উদ্দীপনা, সেরা কর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও ছিল কিছু আনন্দময় আয়োজন। শেষে সবাই মিলে দুপুরে একসঙ্গে আহারের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষে ঢাকার কর্মীরা পরের দিনের পত্রিকা তৈরির কাজে অফিসে ছোটেন। আর প্রতিনিধিদের অধিকাংশ বাড়ির পথ ধরেন, কেউবা প্রথম আলো কার্যালয়ে চলে আসেন; কর্মময় পরিবেশে এই আনন্দঘন দিনটিকে আরও খানিকটা প্রলম্বিত করতে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় সংগীত পরিবেশনা দিয়ে ঠিক ১০টায় শুরু হয়েছিল আনুষ্ঠানিকতা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন সঞ্চালনায়। তিনি বললেন ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো আত্মপ্রকাশের পর থেকে দিনে দিনে শুধু দেশের শ্রেষ্ঠ জাতীয় দৈনিকেই পরিণত হয়নি, এটি এখন একটি অনেক বড় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রজন্মের কর্মীরা এতে যুক্ত হয়েছেন। প্রথম আলো পেয়েছে পাঠকের বিপুল ভালোবাসা। তিনি এই পথপরিক্রমার সাহস, শক্তি ও প্রেরণার কথা বলতে আহ্বান জানালেন নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফকে।

অনুষ্ঠানে কথা বলছেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

‘অসাধারণ এক সময় পেরিয়ে এলাম আমরা। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে এমন এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হলাম, যা নজিরবিহীন। এটা ছিল আমাদের জন্য একটা অগ্নিপরীক্ষার মতো’ বলে বিগত সময়টিকে চিত্রিত করলেন সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সর্বস্তরের নাগরিকেরা স্বৈরশাসকের মারণাস্ত্রের মুখে বুক পেতে দিয়েছে। এক নতুন আশাবাদ জাগিয়েছে। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই উত্তাল দিনগুলোতে সাংবাদিকতা করেছি। আমাদের পরিবেশিত সব তথ্য, পরিসংখ্যান মানুষ সত্য বলে গ্রহণ করেছেন, আন্দোলনকারীরা এতে আস্থা রেখেছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাদের সংবাদে প্রথম আলোর তথ্যই বহুল পরিমাণে উদ্ধৃত করেছে। সংকটকালে আমাদের এই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা দেশে ও বিদেশে যেভাবে সমাদৃত হয়েছে, তাতে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। এই মূল্যবোধ আমরা ভবিষ্যতেও ধরে রাখব।

প্রামাণ্যচিত্রে অভ্যুত্থানের দিনগুলো

অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে আত্ম–উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ছিল গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোরও ওপর রেদওয়ান রনি নির্মিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। স্বৈরশাসকের পতনের দাবিতে গুলির মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ, রাজপথে আন্দোলনরত সহযোদ্ধাদের মধ্যে পানির বোতল বিতরণ করতে করতে গুলিবিদ্ধ হওয়া মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, ছেলের লাশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া মা, বুলেট-বোমা-ব্যারিকেড পেরিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে সড়কে অগণিত নারী-পুরুষের গণজোয়ার, সবশেষে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রীর পলায়নের দৃশ্যগুলো যেন নতুন বাস্তবতায় ফিরে আসে সবার সামনে। এই রক্ত–আগুনভরা দিনগুলোয় প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা কীভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থেকে খবর সংগ্রহ করছিলেন, তা–ও ফুটে ওঠে প্রামাণ্যচিত্রে।

সংবাদ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদার, আলোকচিত্র সাংবাদিক শুভ্রকান্তি দাস, নিজস্ব প্রতিবেদক ড্রিঞ্জা চাম্বুগং, আহমেদুল হাসান, মহমুদুল হাসান, আসাদুজ্জামান, বিশেষ প্রতিবেদক মানসুরা হোসাইন, বদরগঞ্জ প্রতিনিধি আলতাফ হোসেন ও তারাগঞ্জ প্রতিনিধি রহিদুল ইসলামকে। তাঁদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান।

ঝুঁকি নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন প্রথম আলোর কয়েকজন সাংবাদিক। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সতর্ক থাকতে হবে

প্রথম আলোর এই অনুষ্ঠানে প্রতিবছরই বিশেষ অতিথি হয়ে আসেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। এবারেও তার ব্যত্যয় হয়নি। তিনি সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই অনুষ্ঠানে এসে তিনি সব সময় অভিভূত হন, নিজে অনুপ্রাণিত হন। কারণ সম্পাদক মতিউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম আলোর একটি দল হিসেবে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে যা অর্জন করেছে তা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসাযোগ্য।

প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

মাহ্ফুজ আনাম বলেন, এখন এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক মাধ্যমগুলো যেমন দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ক্ষত্রে অভাবিত সুযোগ সৃষ্টি করছে, তেমনি এর একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। মিথ্যা তথ্য, মিথ্যা সংবাদ অনেক বড় ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায়, মিথ্যা প্রচার করে। প্রথম আলো-ডেইলি স্টার অতীতেও এমন কিছু কিছু মানুষের রোষ কবলিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এ কারণে সাংবাদিকদের এখন আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবাদিকতা পেশাটি যে একটি মহৎ পেশা, মনে মনে সেই গর্ব ও এর জন্য দায়বদ্ধতা অনুভব করতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন।

আলোচনার সময় মঞ্চের নেপথ্যের পর্দায় ভেসে ওঠে প্রথম আলোর বর্ষপূর্তির স্লোগান, গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দৃশ্য, বিজয়ের পরে শহরের দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি।

আলাপচারিতার মাঝে মাঝে ভিন্নতা যোগ করতে ছিল কুইজসহ কিছু ব্যতিক্রমী আয়োজন। ছাত্রজীবনে প্রথম আলোর পাঠক, সেই সূত্রে একটু করে লেখালেখি, বন্ধুসভার বন্ধু হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং এরই ধারাবাহিকতায় পাঠপর্ব শেষে প্রথম আলোতেই কর্মজীবনে প্রবেশন এমনও আছেন কেউ কেউ। ‘প্রথম আলোর সঙ্গে বেড়ে ওঠা’ নামের পর্বে তেমন দুজন—মুখ্য ডিজিটাল বিজনেস কর্মকর্তা জাভেদ সুলতান ও সহ সম্পাদক সজীব মিয়া তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাশিল্পী আনিসুল হক সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের বেশি বেশি করে মানুষের কথা লিখতে হবে। সরকার, প্রশাসন, সকল সংস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ঠিক ঠিকভাবে তাদের নিজের দায়িত্ব পালন করে, সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনিয়ম দেখলে তা তুলে ধরতে হবে। অনেক মূল্যের বিনিময়ে মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাদের আকাঙ্ক্ষা মূর্ত করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যে বিজয়ের গল্প লিখে যাচ্ছে, সাহসিকতার সঙ্গে তা তুলে ধরতে হবে।

আলোচনার ফাঁকে একটু সুরের স্পর্শ বুলিয়ে যান প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ গেয়ে।

অনুষ্ঠানে বন্যায় ত্রাণ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন বন্ধুসভার সদস্য ও জেলা প্রতিনিধিরা। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

বন্যা–দুর্যোগেও পাশে প্রথম আলো

গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল প্রবল বন্যার মতো এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কবলিত হয়েছিল। প্রথম আলো বরাবরই সাংবাদিকতার পাশাপাশি সব রকমের দুর্যোগ বিপদ-আপদের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফেনী-নোয়াখালীর বন্যাকবলিত এলাকাতেও বন্ধুসভার সদস্যদের নিয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের কর্মীদের নিয়ে ত্রাণতৎপরতা চালায় দুর্গত এলাকায়। পর্দায় সেসব চিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি ত্রাণ–তৎপরতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন ও ফেনীর সভাপতি বিজয় নাথ। তাদের সঙ্গে ফেনীর প্রথম আলো প্রতিনিধি আবু তাহের ও লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি এ বি এম রিপন ও নোয়াখালী প্রতিনিধি মহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি ও প্রতিবেদকেরা তাঁদের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এতে অংশ নেন রংপুরের আরিফুর রহমান, পটুয়াখালীর শংকর দাস, চট্টগ্রামের সুজয় চৌধুরী, সাভারের শাসসুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাদৎ হোসেন, পঞ্চগড়ের রাজিউর রহমান ও দিনাজপুরের রাজিউল ইসলাম।

প্রথম আলোয় কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কয়েকজন জেলা প্রতিনিধি। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

আলাপচারিতা পর্বের ইতি টানতে মঞ্চে আসেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি এই দীর্ঘ সময়ের পথচলায় প্রথম আলোর অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী সহযোগী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন ১০৫ জন কর্মী নিয়ে পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো যাত্রা করেছিল। আজ কর্মী ৯৬৭ জন। অনেকে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। মিজানুর রহমান খান, অরুণ বসুর মতো অনেকে চিরতরে চলে গেছেন। আবার অনেক নতুন, তরুণ কর্মী যুক্ত হয়েছেন। পত্রিকার পাশাপাশি ম্যাগাজিন, ডিডিটালমাধ্যম, প্রকাশনা, নানা ধরনের সামাজিক উদ্যোগ আয়োজন মিলিয়ে প্রথম আলোর কর্মপরিধি বিপুল পরিসরে বিস্তৃত হয়েছে। মানুষ আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন। সেটিই আমাদের প্রধান শক্তি। এই শক্তি নিয়েই বিগত দিনগুলোতে অনেক বাধা ও প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে প্রথম আলো তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

মতিউর রহমান বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতায় আমাদের সতর্কতা, নিষ্ঠা, বস্তুনিষ্ঠতার অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। ভবিষ্যতের একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। সেখানে আমাদের সৃজনশীলতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। মনে রাখতে হবে সৎ, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও মানুষের ভালোবাসাই প্রথম আলোর সাহস ও প্রেরণা। এ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই প্রত্যয় নিয়েই আগামীর পথে প্রথম আলো এগিয়ে যাবে।

প্রথম আলোর সেরা কর্মী, নিজেদের লেখা ও কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে মঞ্চের মুখরতার সমাপনী ঘটে।

পুরস্কার পেলেন যাঁরা

বিভিন্ন বিভাগে ২০২৪ সালের সেরা কর্মীর পুরস্কার পেয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সম্পাদকীয় সহকারী মনোজ কুমার দে, ফিচার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ, সমন্বিত বার্তা বিভাগের সহকারী বার্তা সম্পাদক (শিফট ইনচার্জ) আজিজ হাসান, সমন্বিত বার্তা বিভাগের সহসম্পাদক ফাহমিদা আক্তার, ক্রীড়া বিভাগের সহসম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সহসম্পাদক (শিক্ষা-চাকরি) মো. আব্দুর রাজ্জাক সরকার, রিপোর্টিং বিভাগের নিজস্ব প্রতিবেদক আহমদুল হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক সুহাদা আক্তার আফরিন, শিক্ষানবিশ প্রতিবেদক মো. আসিফ হাওলাদার, বিশেষ প্রতিবেদক (বাণিজ্য বিভাগ) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শাহ, ফটোসাংবাদিক দীপু মালাকার, ডিজিটাল ব্যবসায় এর মনিটাইজেশন অ্যান্ড অ্যাড অপারেশনসের ব্যবস্থাপক বাবলু চাকমা, বিজ্ঞাপন সেলসের উপব্যবস্থাপক (অ্যাড সেলস) সৈয়দ জালাল উদ্দিন মহম্মদ আকবর, জ্যেষ্ঠ সম্পাদনা সহকারী মো. আবদুল বাছেদ, ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, হিসাব বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম, মানবসম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পলাশ মন্ডল, প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী দীপক কুমার পাল, চট্টগ্রাম অফিসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গাজী মো. ফিরোজ খান, কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত।

বিভিন্ন বিভাগের সেরা কর্মীর পুরস্কার হাতে প্রথম আলোর সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা। আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া সেরা প্রতিনিধির পুরস্কার পেয়েছেন, আব্দুল আজিজ, প্রতিনিধি, জামালপুর, উত্তম মন্ডল, প্রতিনিধি, খুলনা, মঈনুল ইসলাম, আলোকচিত্রী, রংপুর। সেরা দলের পুরস্কার পেয়েছ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড সিস্টেম সাপোর্ট, আইটি বিভাগ।

নিজের লেখা প্রতিযোগিতায় সাংবাদিকতা বিভাগে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম, সিনিয়র কনটেন্ট প্রোডিউসার, দ্বিতীয় হয়েছেন শিশির মোড়ল, বিশেষ প্রতিনিধি ও তৃতীয় হয়েছেন তারেক মাহমুদ, ক্রীড়া সম্পাদক। সাংবাদিকতাবহির্ভূত বিভাগে প্রথম মো. আখতারুজ্জামান সরকার, জোনাল ম্যানেজার (বগুড়া), দ্বিতীয় ঝর্না আক্তার শোভা, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ, মানবসম্পদ ও তৃতীয় হয়েছেন আতিকুর রহমান, প্রশাসনিক সহযোগী।

কুইজে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন লিলি ইয়াসমিন, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ, কাস্টমার সাপোর্ট (প্রথমাডটকম) দ্বিতীয় মোহাম্মদ মনজুর কাদের জিলানী, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালচার অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট বিভাগ ও তৃতীয় হয়েছেন মো. মাসুদ রানা, নির্বাহী, মার্কেটিং, মার্কেটিং বিভাগ।