ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়াজুড়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না–ও আসতে পারে। তবে প্রথম দফায় যতটা একনায়ক তিনি ছিলেন, এবার তার চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রায় তাঁর স্বৈরশাসক হওয়ার ইঙ্গিত আছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনব্যাপী বঙ্গোপসাগর সংলাপ বা বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনে ‘এশিয়া এবং বৈশ্বিক দক্ষিণে ট্রাম্পের আমেরিকার প্রভাব’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এমনটাই আভাস দেন। আয়োজন করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোযোগ ছিল এশিয়ার দেশগুলোর ওপর। কেউই জানে না ট্রাম্পের ফিরে আসার ফলটা কেমন হবে। এবার কি গুরুত্ব কম হবে? এভাবে আলোচনার সূত্রপাত করেন সঞ্চালক এবং টাইম সাময়িকীর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক চার্লি ক্যাম্পবেল।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রশাসনে যাঁদের নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, তিনি প্রথম দফায় একনায়ক ছিলেন। এবার যাঁদের তাঁর কেবিনেটে নেওয়া হবে সেটা থেকে স্পষ্ট যে একেবারেই রিপাবলিকান পার্টি এবং নিজের অনুগতদের তিনি যুক্ত করছেন। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফাতেও ট্রাম্পের মনোযোগ থাকবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কেমন হবে, তার ওপর। তবে এটা অনস্বীকার্য যে একনায়কেরা আবেগতাড়িত হয়েই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেন।’
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দেশটির পাশাপাশি পাকিস্তান নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ বা আগ্রহ কমেছে। এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তি রয়েছে। এ জন্য দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে তাদের অংশীদার বিবেচনা করে, পাকিস্তানকে নয়। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাকিস্তান। পাশাপাশি পাকিস্তানকে আবার চীন কিংবা অন্য কোনো অক্ষে পুরোপুরি ঠেলে দেওয়ার ইচ্ছাও যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তবে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ হবে, এমন আশাবাদের কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ট্রাম্পের প্রথম আমলটাই ছিল একনায়কতান্ত্রিক। আর একনায়কদের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে তাঁর এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি অনেক বেশি লেনদেনভিত্তিক হবে এবং অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত হবে। তবে তাঁর চীন নীতির পরিবর্তন হবে না। কিছু অনিশ্চয়তা ও অপ্রত্যাশিত হবে সামনের চার বছরে।
হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার পালাবদল আওয়ামী লীগ বা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে কি, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বর্তমান সরকার কিংবা বিরোধী দল—যে ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দক্ষিণ এশিয়ার নীতি আংশিকভাবে বর্তমানের ধারাবাহিকতা আর আংশিকভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রার ভিত্তিতে হবে। একদিকে থাকবে কৌশলগত দিক আর অন্যদিকে থাকবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রার বিষয়টি। তাই ট্রাম্পের আসার ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন, চাপ কিংবা সুফল বয়ে আনবে না। ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আর মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তবে আমি মনে করি না, ওয়াশিংটনের পরিবর্তন আওয়ামী লীগ বা অন্য কারও জন্য সুফল বয়ে আনবে।’
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক সজ্জনহার বলেন, ‘বাইডেনের আমলে অংশীদারত্ব বেড়েছে তাৎপর্যপূর্ণভাবে। নানা ক্ষেত্রে এই অংশীদারত্ব বেড়েছে। কৌশলগত নীতির ক্ষেত্রে দুই দেশের ঐকমত্যের কারণে সম্পর্ক এগিয়েছে। আমাদের সম্পর্ক দুই দশক ধরে ঊর্ধ্বমুখী, বিশেষ করে বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের পর থেকে। কাজেই ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় এতে পরিবর্তনের কোনো কারণ দেখছি না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
চায়না ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিপিং শিয়া বলেন, ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্রে চীনে ব্যবসার সম্প্রসারণ বন্ধ হবে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে তা শুধু দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে সীমিত থাকবে না, তা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলবে।