বুঝিয়ে দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নষ্ট হচ্ছে: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কমপ্লেক্স করছি। কিন্তু কার কাছে বুঝিয়ে দেব? জেলা (মুক্তিযোদ্ধা) কমপ্লেক্স বলেন, উপজেলা (মুক্তিযোদ্ধা) কমপ্লেক্স বলেন। সেগুলো অনেকটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জং ধরে যাচ্ছে।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
কয়েক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’ দেবেন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এগুলো কে বিতরণ করবে? যদি বলেন মন্ত্রণালয় করবে। মন্ত্রণালয় কী করে জানবে বাগেরহাটের কোনো একটি থানায় আর্থিকভাবে কে অস্বচ্ছল, কে পাওয়ার যোগ্য, কে যোগ্য না? এটা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে ওই উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলতে পারবেন। আজকে যদি সংসদ থাকত, তাঁরা করে দিতে পারতেন। সংসদ থাকলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। নির্বিঘ্নে ভালো কাজগুলো করা যেত।’
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। আরও আগে নির্বাচন হতে পারত। আমাদের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মেয়াদ শেষ বলে গড়িমসি করে আর করেননি। নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসেছেন, ধন্যবাদ তাঁকে যদি তিনি কথা রাখেন। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, রোজার আগে নির্বাচন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিই যে তিনি কষ্টিপাথরের মতো সোনা যাচাই করতে পারেন। গতকাল মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। যখন সাহাবুদ্দিনের কথা অনেকে শুনলেন, তখন অনেকেই একটু অবাক হয়েছিলেন, ইনি কে? কিন্তু তাঁর জীবনবৃত্তান্ত দেখে সবাই বুঝতে পেরেছেন, প্রধানমন্ত্রী সঠিক কাজটি করেছেন।’
আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে যাঁদের নির্বাচিত করেছে, তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল কাকে? একজন আবদুর রহমান, কে তিনি? তিনি বরিশালের মানুষ এবং পিস (শান্তি) কমিটির নেতা ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি করেছিল বিএনপি। তিনিও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মানুষ।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে। আমাদের তো তত্ত্বাধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা আছে। তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ছিল। বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র সবাইকে হেনস্তা করেছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আপনারা কী গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে কোনো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দুই বা তিন বছর থাকবে না? ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। বাংলাদেশে আর কোনো অনির্বাচিত সরকার ফিরে আসবে না। তারপরও তারা বারবার একই ক্যাসেট বাজাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বীর বিক্রম মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান, বীর বিক্রম মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।