চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত অধ্যাপকের স্থায়ী অব্যাহতির দাবিতে আন্দোলন চলছে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে রসায়ন বিভাগের এক অধ্যাপকের স্থায়ী অব্যাহতির দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। আজ সোমবার তৃতীয় দিনের মতো রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে দিনব্যাপী আন্দোলন করেছেন। তাঁরা জানান, ওই শিক্ষককে স্থায়ী অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
গত ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য শিরীণ আখতারকে চিঠি দিয়ে রসায়নের বিভাগের ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করেছিলেন এক ছাত্রী। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। টানা তিন দিন ধরে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দিচ্ছেন। এর মধ্যে অভিযুক্ত অধ্যাপককে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীরা।
আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। দ্রুত জেলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করতেও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা।
রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে ধিক্কার জানান শিক্ষার্থীরা। নিজ বিভাগকে তাঁরা নিরাপদ মনে করেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই অধ্যাপককে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হবে, তত দিন তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ভুক্তভোগীর এক সহপাঠী প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো ছাত্রী এ ধরনের ঘটনার শিকার না হন, সেটি প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু বিচার পেলেই তাঁরা আন্দোলন থামাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্তা, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘটনার বিচার হয় দুটি কমিটির মাধ্যমে। একটি অভিযোগ কমিটি ও অপরটি যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল। কোনো ছাত্রী অভিযোগ দিলে প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযোগ কমিটি। এই কমিটি অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিয়ে যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেলে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর নিরোধ সেল প্রতিবেদন যাচাই–বাছাই করে শাস্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে।
রসায়ন বিভাগের ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা এখন অভিযোগ কমিটি তদন্ত করছে। জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের পরিচালক জরিন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁরা প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন ও নিরোধ সেলের প্রধান হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। জানতে চেয়ে আজ সকালে তাঁর কার্যালয়ে গেলেও পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে গতকাল রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ের (ভুক্তভোগী ছাত্রী) অসম্মান আমি মেনে নেব না। অভিযোগ কমিটি এটি নিয়ে কাজ করেছে। অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা নিশ্চিত করব।’