সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি, না হলে কাকরাইলে অবস্থানের হুমকি জোবায়েরপন্থীদের

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন তাবলিগ জামাতের জোবায়েরপন্থী হিসেবে পরিচিতরা। আজ দুপুরা রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে হামলায় তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীরা জড়িত দাবি করে তাঁদের নিষিদ্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শুরায়ি নেজাম বা বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা। পাশাপাশি সেখানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এই দুই দাবি পূরণ না হলে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে তাবলিগ জামাতের জোবায়েরপন্থীরা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন জোবায়েরপন্থী হিসেবে পরিচিত মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী।

কেফায়েতুল্লাহ আজহারী বলেন, সাদপন্থীরা তাবলিগ জামাত নয়। তাঁরা চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী বাহিনী। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাঁরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা ও অনেক মানুষকে আহত করেছেন। তাঁদের নামে মামলা হলেও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে তেমন অগ্রগতি নেই। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সাদপন্থীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমা ময়দানসহ তাবলিগের সব কার্যক্রম শুরায়ি নেজামের (জোবায়েরপন্থী) অধীনে পরিচালনা করতে হবে।

তাবলিগের কোনো কার্যক্রম সাদপন্থীদের করতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে কেফায়েতুল্লাহ আজহারী বলেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হলে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকরাইল মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। খুনিদের গ্রেপ্তার ও সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত। এর এক ভাগে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা, অন্য ভাগে শুরায়ি নেজাম বা বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা।

১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ইজতেমা ময়দানে জোবায়েরপন্থীদের সঙ্গে সাদপন্থীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাদ কান্ধলভির অনুসারী হিসিবে পরিচিত ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক শ জনকে আসামি করে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন জোবায়েরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এস এম আলম নামের এক ব্যক্তি। এ মামলায় ১৯ ডিসেম্বর রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানার মুফতি মুয়াজ বিন নূরকে রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাবলিগ জামাতের সাদপন্থী নেতা মুয়াজ বিন নূরের নিঃশর্ত মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করেন সাদপন্থীরা। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানান তাঁরা। এর এক দিন পর আজ কাকরাইল মসজিদে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করলেন জোবায়েরপন্থীরা।

জোবায়েরপন্থীদের সংবাদ সম্মেলনে মুফতি আমানুল হক বলেন, সাদপন্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। অথচ লাখ লাখ মানুষের সামনে সাদপন্থীরা হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করেছেন। হত্যায় জড়িত হয়ে হত্যা মামলা প্রত্যাহার চাওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। সাদপন্থীরা তাবলিগের কার্যক্রমে সমান অধিকারের দাবি করেছেন। মানুষ হত্যা তাবলিগের কার্যক্রমের অংশ হতে পারে না। তাঁদের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, সাদপন্থীরা একজন ব্যক্তির অনুসারী। সাদ কান্ধলভি একজন ব্যক্তি। তাঁরা কোনোভাবেই তাবলিগের একটি পক্ষ হতে পারে না।