জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক (বাঁয়ে) ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর চালুর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দপ্তরটি খুলতে দেওয়া হবে না, এটাও বলা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।

আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে নিজের দপ্তরে তিনি বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠক করেন।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) খোলার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মতি দিয়েছে, সম্প্রতি এমন একটি খবর গণমাধ্যমে এসেছে। আবার সরকারের অসম্মতি এবং এখনই এই দপ্তর চালু হচ্ছে না, এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সম্মতি ও অসম্মতি তো একসঙ্গে হতে পারে না। যখন সম্মতি ও অসম্মতির প্রশ্ন আসে, তখন বুঝতে হবে যে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। অথবা এটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এটাই প্রকৃত অবস্থা। আসলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে (ওএইচসিএইচআরের) অফিস দেওয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দেওয়া হবে না, এটাও বলা হয়নি। আমরা বিষয়টি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রস্তাব বলতে কী বোঝাতে চান (উত্তর), সেটার ওপর নির্ভর করে। আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিতভাবে কোনো প্রস্তাব দেয়নি, কথাবার্তা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

ওএইচসিএইচআরের দপ্তর খোলা এবং জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ এর মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ দুটিকে খুব বেশি রিলেটেড মনে করি না। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কাজে তাদের (বাংলাদেশে) আসার জন্য অনুরোধ করেছি। আমরা জানি, সার্বিকভাবে মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা ছিল। আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়। আমি তাদের এ কথাও বলেছি যে আপনাদের ও আমাদের লক্ষ্য আসলে একই। আমরা কীভাবে কাজ করব, পরস্পরকে সহায়তা করব, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’

ওএইচসিএইচআরের দপ্তর চালু-সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অফিস দিলেই ঠিক হয়ে যাবে, আর না দিলে ঠিক হবে না—এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। খুব অল্প কিছু দেশেই ওএইচসিএইচআরের অফিস আছে।

এই দপ্তর খুলতে দিলে সমস্যা কী, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা এভাবে না বলে বলতে পারি, আমরা দেখি যে আমাদের প্রয়োজন আছে কি না।’

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল প্রতিবেদন দিয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। তারা কিছু কথাবার্তা বলে গেছেন। এর মধ্যে তো আমরা বিশেষ কাজে তাদের একটি দলকে (জাতিসংঘের) বাংলাদেশে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছি। তারা প্রায় এক মাস এখানে কাজ করেছে। তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে আরও এক মাস সময় লাগবে। বাংলাদেশে চার সপ্তাহজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেটার ওপর তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।’

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের সময়সীমার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বলেছি, আপনারা দেখতে চান দেখুন। আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুরোধ করেছিলাম। তাদের কোনো সহায়তা লাগলে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানালে সহায়তা করা হবে। তথ্যানুসন্ধান দল কাজ করছে। তারা তাদের সুপারিশ দিতে নভেম্বর পার হয়ে যাবে।’