বদলাচ্ছে স্থাপত্যশৈলী, বাড়ছে দৃষ্টিনন্দন আবাসনের চাহিদা

গ্রাহকেরা সুবিধা এবং অন্যান্য বিষয় ছাড়াও মনোযোগী হয়ে উঠছেন ঘরের সৌন্দর্যের দিকেও

একজন সাংবাদিক বিখ্যাত ইতালীয় স্থপতি রেনজো পিয়ানোকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি অনেক বড় বড় স্থাপনার স্থপতি। আপনাকে যদি বলা হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য বাড়ি বানাতে, কীভাবে করবেন?’

উত্তরে রেনজো মাত্র তিনটি বিষয় বলেছিলেন—পেইন্ট ইট হোয়াইট, মেক ইয়োর উইন্ডোজ বিগার অ্যান্ড ইউজ লেস ফার্নিচার! এর অর্থ, দেয়ালের রং হতে হবে সাদা, জানালা হতে হবে বড় এবং যে আসবাবগুলো না হলেই না, শুধু সেগুলোই ঘরে রাখতে হবে। তাহলে একটা সাধারণ স্থাপনাও হয়ে উঠবে দর্শনীয়।

ইতালীয় এই স্থপতির কথা কেন প্রাসঙ্গিক, বর্তমান আবাসনশিল্পের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। ইট, কংক্রিট দিয়ে এখন শুধু আর ইমারত বানানো হয় না। লেখা হয় কবিতা! আঁকা হয় দৃষ্টিনন্দন শহরের ছবি। গ্রাহকেরা সুবিধা এবং অন্যান্য বিষয় ছাড়াও মনোযোগী হয়ে উঠছেন ঘরের সৌন্দর্যের দিকেও।

একটা সময় বাংলাদেশের সাধারণ আবাসনশিল্পে স্থপতিদের সম্পৃক্ততা তেমন ছিল না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং রাজমিস্ত্রিদের পরিকল্পনাতেই একটি বাড়ি তৈরি হতো। তখন শুধু বাণিজ্যিক ভবন বা সরকারি স্থাপনার জন্য স্থপতিদের সাহায্য নেওয়া হতো। কিন্তু গত এক দশকে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় আবাসনপ্রতিষ্ঠানের প্রকল্পগুলো ডিজাইন করছেন স্বনামধন্য দেশি-বিদেশি স্থপতিরা।

দিন দিন কেন বাড়ছে স্থাপত্যশৈলীর চাহিদা, কারণটা কি শুধুই সৌন্দর্য?

না। একজন স্থপতি যখন কোনো একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন, তিনি প্রতিটি বিষয়ের দিকে সূক্ষ্মভাবে লক্ষ রাখেন। নির্মাণের উপাদান থেকে শুরু করে নির্মাণকৌশল, ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা কীভাবে নিশ্চিত হবে, ভাবনাগুলো সব সময়ই তাঁদের মাথায় থাকে। কাজেই তাদের প্রকল্প যখন বাস্তবায়িত হয়, সেই আবাসন সব দিক দিয়েই হয়ে ওঠে অনন্য।

এ বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো নির্মাণেই স্থপতিদের সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত জরুরি। স্থপতিরা শুধু ভবনের সৌন্দর্যের বিষয়টাই খেয়াল রাখেন না, নকশা ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তাঁরা বসবাসকারীর সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করেন। ভবনের ভেতরে আলো-বাতাসের বাধাহীন প্রবাহ, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা—সবকিছুই স্থপতিদের কাজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি ভবনে বসবাসকারী মানুষের সব ইন্দ্রিয়ের কথা চিন্তা করেই স্থপতিরা নকশা করেন। সেই ভবনে সাংস্কৃতিক ছোঁয়া থাকবে কি না, সেটা পরিবেশবান্ধব হবে কি না এবং কোনো শিশুর সেই ভবনে বেড়ে ওঠার অনুভব কেমন হবে, সেটা নিশ্চিত করাটাও একজন স্থপতির দায়িত্ব।’

স্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই করে তুলতে স্থপতিদের গুরুত্ব অপরিসীম। যেভাবে পৃথিবীতে স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে, সেভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী থেকে ক্রমশ অরণ্য এবং গাছপালা কমে যেতে শুরু করবে। এ কারণে প্রকৃতিকে অক্ষত রেখেই স্থপতিরা বিভিন্ন স্থাপনার ডিজাইন করছেন। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন আবাসিক ভবনও। প্রকৃতির সঙ্গে অপূর্ব মেলবন্ধনের কারণে এই স্থাপনাগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমন পরিবেশবান্ধবও।

ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম মেগাসিটিগুলোর একটি। ক্রমান্বয়ে এখানে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরেই নগর–পরিকল্পনাবিদেরা চাইছেন ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে। ফলে আবাসনশিল্পেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা আনা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের মতো বিভিন্ন সংস্থা।

সংশ্লিষ্টরা আশা করেন, দেশে আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবনসহ বিভিন্ন নির্মাণে স্থপতিদের সংশ্লিষ্টতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তাতে গড়ে উঠবে টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন শহর।