ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যমসহ আরও চারটি বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ কাজ করছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, প্রথম পর্বে শহীদ পরিবারকে ৩০ লাখ করে টাকা দেওয়া হবে। এর আগে ৬ অক্টোবর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা অভ্যুত্থানে নিহত ৭৩৭ জনের খসড়া তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শহীদদের একটি তালিকা হয়েছে। এই তালিকা করতে গিয়ে একটি বিষয় তাঁদের ভোগাচ্ছে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের কাগজপত্র সেই সময় (বিগত সরকারের সময়) সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অনেক কাগজপত্র সরিয়ে ফেলার কারণে অনেক জায়গা থেকে তথ্য পেলেও হাসপাতালের সঙ্গে ‘ক্রস চেক’ করা যায়নি। ফলে মাঠপর্যায় থেকে যাচাই–বাছাই করে আনতে হচ্ছে। যেসব হাসপাতাল থেকে কাগজপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের সবার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সেই দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কিছু উদ্বেগের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একাংশের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি জানানো হয়েছে। সরকার আট দফা বিবেচনায় নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথা বলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাও আশ্বস্ত করেছি, আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমেও করছি, নতুন এই বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিচয়ে কারও অনিরাপদ বোধ করার কারণ নেই।’
গণমাধ্যম প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা বাক্-স্বাধীনতায় কোনো রকম হস্তক্ষেপ করছি না। এটি আমাদের নীতিগত অবস্থান। আপনারা যা বলতে চাচ্ছেন, যা লিখতে চাচ্ছেন—সবই লিখছেন, সবই বলছেন। একটি জিনিস আমাদের নজরে এসেছে। সেটি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্যে তথ্য বিকৃত করা হচ্ছে। কিছু মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। মিথ্যা বিষয়গুলো যাঁরা আনছেন, তা না আনলেই ভালো হয়।’
আরও ৪ সংস্কার কমিশন
আরও চারটি সংস্কার কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে থাকবেন শিরীন পারভীন হক।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই চার কমিশনের সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জানিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। শিক্ষা খাতে কোনো কমিশন গঠন করা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আলোচনার মধ্যে আছে।
এর আগে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশন ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।