বিছানায় শুয়ে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। দুই পাশে বসে পা টিপছেন সংগঠনটির অপর দুই নেতা। এমন একটি ছবি আজ সোমবার বিকেলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকেই সমালোচনা করছেন। তবে রেজাউল হকের দাবি, তিনি অসুস্থ থাকায় ওই দুই নেতা তাঁকে সেবা করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষ থেকে তোলা। তিন আসনের এ কক্ষ দখল করে একাই থাকেন রেজাউল হক। যদিও তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে প্রায় এক দশক আগে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রেজাউল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন প্রায় ১৭ বছর আগে, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে। তিনি স্নাতক পাস করেন ২০১০ সালে। স্নাতকোত্তর পাস করেছেন ২০১৩ সালে।
রেজাউল হক ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পান ২০১৯ সালে ১৪ জুলাই। সভাপতির মেয়াদ এক বছর হলেও তিনি এখনো এই পদে রয়ে গেছেন। তাঁর শিক্ষাবর্ষের অন্য শিক্ষার্থীরা অন্তত ৯ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই সদস্যও তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট।
রেজাউল হকের শিক্ষাবর্ষের অন্য শিক্ষার্থীরা অন্তত ৯ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই সদস্যও তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট।
পা টেপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ছবিটি করোনা মহামারির সময়ের। তখন ইউরিক অ্যাসিডের কারণে তাঁর পা ফুলে গিয়েছিল। এ সময় ‘জুনিয়ররা’ তাঁকে সেবা করেছিলেন। তাঁরা অসুস্থ হলে তিনিও সেবা করেন।
তবে করোনাকালীন ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল বন্ধ ছিল। বন্ধ হলে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছিল, জানতে চাইলে রেজাউল দাবি করেন, তাহলে ছবিটি বছরখানেক আগের। তিনি সঠিক তারিখ মনে করতে পারছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, রেজাউল হক তাঁর চেয়েও বয়সে বড়। ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়মিত ছাত্র দিয়ে পরিচালনা করা উচিত।
ছবিতে ছাত্রলীগের যে দুই নেতাকে পা টিপতে দেখা গেছে, তাঁদের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছবিটি প্রায় দেড় বছর আগের। তখন রেজাউল হক অসুস্থ ছিলেন। তাই তাঁরা সেবা করেছিলেন। তিনি অসুস্থ থাকলে জুনিয়ররাও তাঁকে সেবা করেন।
ছবিতে থাকা অপরজন উল্টো দিকে ফিরে থাকায় তাঁর চেহারা দেখা যায়নি। তবে তিনি ছাত্রলীগের উপক্রীড়া সম্পাদক শফিউল ইসলাম বলে নিশ্চিত করেছেন শামীম আজাদ। এ বিষয়ে কথা বলতে শফিউল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
এ নিয়ে সমালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, রেজাউল হকের সভাপতি পদে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই৷ তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অন্তত ১০ বছর আগে। অতীতেও তিনি নারীসংক্রান্ত বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন। চাঁদাবাজি নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফজলে রাব্বি বলেন, রেজাউল হক তাঁর চেয়েও বয়সে বড়। ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়মিত ছাত্র দিয়ে পরিচালনা করা উচিত।