বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষায় জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। সেই সঙ্গে জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি করে কাল মঙ্গলবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর হিন্দুদের মুখে কালো কাপড় বেঁধে এবং চিন্ময় দাসের মুক্তির প্ল্যাকার্ড–সংবলিত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার (পোস্ট) অনুরোধ জানিয়েছে জোট।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় জোটের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্টের পাশাপাশি বুধবার প্রার্থনার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। বুধবার গীতা জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিটি মন্দিরে চিন্ময় দাসের মুক্তি কামনায় গীতাপাঠ করার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে মানবাধিকার দিবস পালিত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু জনসাধারণ ভালো নেই। তাদের মানবাধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের।
এতে আরও বলা হয়, ‘৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একটি বৈষম্যহীন দেশ গঠনের আশাবাদী ছিল। কিন্তু তা না হয়ে পরবর্তী সময় দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস, মন্দিরে আগুন, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশে কোনো হিন্দু নির্যাতন হয়নি বলেও প্রচার করা হয়েছে। নির্যাতনের পর হিন্দুরা ৮ দফা দাবি নিয়ে সারা দেশে আন্দোলন করেছে। অধিকার আদায়ে এবং স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু অতীতের অন্যান্য সরকারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও হিন্দুদের দমন করার চেষ্টা করেছে। আলোচনার মাধ্যমে দাবিগুলো পূরণ না করে উল্টো বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিনায় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ হিন্দুদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যায়ভাবে। শুধু তা–ই নয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে তুলতে গিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার দোষ চাপানো হয়েছে নিরীহ হিন্দুদের ওপর।’
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনার পর থেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হিন্দুদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে আদালতে যে আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। তাঁদের চেম্বার ভাঙচুর ও হামলা করা হয়। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।’
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় ৬ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।