শুল্ক কমানোয় কতটা কমতে পারে চালের দাম
বাজারে চালের দাম কমানোর জন্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। চাল আমদানির মোট করভার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে চাল আমদানির শুল্ক–কর কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা কমবে। যদিও বাজারে দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমার সম্ভাবনা কম।
কেন দাম কমার সম্ভাবনা কম, সেই প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেড়ে গেছে। ফলে শুল্ক কমানোর সুফল ততটা পাওয়া যাবে না। অবশ্য সরকার যদি বাজারে চাল বিক্রি বাড়ায়, তার একটা প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। এই বন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রাহাত ট্রেডার্স ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাহাত ট্রেডের মালিক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক কমানোর কারণে আমদানিতে খরচ কমবে তিন থেকে চার টাকা।
ওদিকে ভারতে দাম কেজিপ্রতি দুই টাকার মতো বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে কিনে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজি মোটা চালে গড়পড়তা (সব ব্যয় ও মুনাফা যোগ করে দাম) দাম পড়বে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। আর সরু চালে দামটি দাঁড়াবে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা। দুই ক্ষেত্রেই দাম আগের চেয়ে দুই থেকে তিন টাকা কম।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনেও ভারতে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবারের এই প্রতিবেদন বলছে, শুক্রবার ভারতে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের প্রতি টনের দাম ওঠে ৩৮০ মার্কিন ডলারে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৬৯ ডলার।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ঢাকার বাজারে এক কেজি মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম উঠেছে ৫৫ টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই দাম বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকে মোটা চালের দাম কেজিতে ৫০–৫২ টাকায় উঠেছিল।
বাজারে এখন এক কেজি মাঝারি চাল ৫৬ থেকে ৬৪ টাকা এবং সরু চাল ৬৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম কমাতে সরকার গত জুলাইয়ে প্রায় ১০ লাখ টন চাল বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অনুমতি দেয়। ওই সময় এক দফায় শুল্ক–কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। যদিও ডলারের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় আমদানির ব্যয় কমেনি। চালও তেমন একটা আমদানি হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, গত ১ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪৫ হাজার টন চাল। এরপর গত রোববার রাতে চাল আমদানির শুল্ক আরও কমানো হয়।
বাংলাদেশ চাল আমদানি করে মূলত ভারত থেকে। বেনাপোল স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, সেখানে শুল্কহার সমন্বয় না হওয়ায় গতকাল সোমবার চাল খালাস হয়নি।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে জানান, সোমবার বন্দরটিতে চালবাহী প্রায় ২২৮টি ভারতীয় ট্রাক পণ্য খালাসের অপেক্ষায় ছিল। এদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৪টি ভারতীয় ট্রাক থেকে চাল খালাস করা হয়। তিনি বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে চাল আমদানি কিছুটা বেড়েছে।
সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল, তার মধ্যে একটি মজুমদার প্রোডাক্টস। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে জানান, সোমবার তাঁর প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৯০০ টন চাল খালাস হয়েছে।
এর মধ্যে কাটারিভোগ চাল প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি সম্ভব হবে। আর সরু চাল বিক্রি করা যাবে ৬৮ টাকার আশপাশের দামে। তিনি বলেন, সরকার শুল্ক কমানোয় তাঁদের খরচ কেজিপ্রতি ৫ টাকার মতো কমেছে। বিপরীতে ভারতে এক সপ্তাহে আড়াই টাকার মতো দাম বেড়েছে।
শুল্ক কমানোর কারণে দাম কমবে কি না, জানতে চাইলে চিত্ত মজুমদার বলেন, দাম হয়তো তেমন একটা কমবে না। তবে ইতিবাচক দিক হলো, মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাটি থামবে। এখন অনেকেই চাল আমদানি শুরু করবেন।
দেশের বাজারে ২০২০ সালের শুরু থেকেই চালের দাম চড়া। টিসিবির হিসাবে, ওই বছর ১ জানুয়ারি ঢাকার বাজারে মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩০ টাকা।
মধ্যম আয়ের পরিবারে যে মিনিকেট চাল জনপ্রিয়, সেটি কিনতে এক কেজিতে দাম দিতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা, যা ২০২০ সালের শুরুতে ৫০ টাকার কম ছিল। যেহেতু এখন আমদানিতে বড় ধরনের শুল্কছাড় দিয়েও দাম কমানোর সুযোগ কম, সেহেতু বাজারে চালের দাম চড়াই থাকছে।
ভারতের বিকল্প দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করা যায়। চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার আমদানির সুযোগ রেখেছে। থাইল্যান্ড বা অন্য দেশ থেকে আমদানির বিষয়টি সেসব দেশের দামের ওপর নির্ভর করে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, থাইল্যান্ডে ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের দাম প্রতি টন ৪১৭ মার্কিন ডলার, যা ভারতের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, দিনাজপুর]