স্ত্রীকে বুটিক ব্যবসায়ী সাজিয়েও পার পেলেন না সাবেক এএসপি

চট্টগ্রামের খুলশীতে স্ত্রীর নামে দেখানো অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেমের চারতলা বাড়িছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রামে স্ত্রীকে বুটিক ব্যবসায়ী সাজিয়েও পার পেলেন না অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা। স্ত্রীর ব্যবসার টাকায় নগরের খুলশীতে চারতলা বাড়ি করেছেন দাবি করলেও স্ত্রীর ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, পুলিশের চাকরিতে থাকার সময় অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে বাড়িটি করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম আবুল হাশেম। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে দুদক আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পৃথক দুটি মামলা করেছে।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক আতিকুল আলম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আরেক মামলায় আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার তথ্য গোপন এবং ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।

দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোসাব্বির আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া এ সম্পদের বাইরে আর কোনো সম্পদ আছে কি না, তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।

১৯৮৮ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন রাউজানের আবুল হাশেম। ২০২২ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) পদে থাকাকালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান।

দুদক সূত্র জানায়, চাকরিজীবনে ঘুষ–অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালে আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদবিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। পরে তাঁরা সম্পদবিবরণী জমা দেন। বিবরণী যাচাই–বাছাই করে দুদক দুজনের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৬২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পায়।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম ২০১৫ সালে নগরের খুলশীর রূপসী হাউসিং সোসাইটি এলাকায় চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই সময় তাঁর স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। স্ত্রীর আয় দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করিয়েছেন দেখানোর জন্য স্ত্রীকে বুটিক ব্যবসায়ী ও টিউশনি করিয়েছেন দাবি করেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে স্ত্রীর বুটিক ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মূলত অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে হাশেম বাড়িটি নির্মাণ করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতিবাজেরা অবৈধ অর্থ আড়ালে রাখতে তাঁদের স্বজনের নামে সম্পদ কিনে থাকে। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হাশেমও তার ব্যতিক্রম নন। যথাযথভাবে তদন্ত করে এগুলো বের করে আনতে হবে দুদককে। নইলে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজেরা আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে।