৭ লাখ মানুষের মধ্যে প্রশমন সেবা পায় ১০০–এর কম
চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেশে এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা সাত লাখের কিছু বেশি। এদের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার শিশু। জীবনের শেষ প্রান্তে থাকা এসব মানুষের জন্য দরকার প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা। এই সেবা পায় শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য এক (০.০০১) শতাংশের কম মানুষ।
আজ বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আয়োজিত সম্মেলনের শেষ দিনের একটি কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ সোসাইটি ও ভারতের কেরালা রাজ্যের ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ মেডিসিন।
গতকাল বুধবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের এই সম্মেলন আয়োজন করে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সিমনস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল।
কর্মশালায় বলা হয়, চিকিৎসায় ভালো হবে না, এমন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের ভোগান্তি বা কষ্ট কমানোর জ্ঞান হচ্ছে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা। এই প্রান্তিক মানুষদের যন্ত্রণা কমানোর যে চিকিৎসা, সেটাই প্রশমন চিকিৎসা বা প্যালিয়েটিভ মেডিসিন। এ বিষয়ে দেশে প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রতিষ্ঠানের অভাব আছে, মানুষের ধারণাও অস্পষ্ট। জনসচেতনতা নেই বললেই চলে।
কর্মশালায় মূল বক্তব্যে বিএসএমএমইউয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসকেরা অনেক রোগীকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। বলেন, তাদের আর কিছু করার নেই। ওই মুমূর্ষু ব্যক্তির শেষ পর্যন্ত ঠাঁই হয় পরিবারে। কিন্তু কীভাবে ওই মানুষটিকে সেবা দিতে হবে, তা পরিবার জানে না।
অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আরও বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের যদি জ্ঞান থাকে, প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে তাঁরা ঠিক সেবাটা করতে পারে এবং ওই ব্যক্তির যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় মির্জাপুরে তাদের ক্যাম্পাসে প্যালিয়েটিভ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এ কর্মসূচির নাম দিয়েছে মমতাময়ী কুমুদিনী।
মির্জাপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ডে কুমুদিনী জরিপ করেছে। জরিপে এসেছে এই ওয়ার্ডগুলোতে ৩২ হাজারের কিছু বেশি মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে প্যালিয়েটিভ কেয়ার লাগবে ৭৬ জনের।
ভাষাসৈনিক ও কুমুদিনী ট্রাস্টের পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদ্দি বলেন, কোনো মানুষ বিনা যত্ন ও চিকিৎসায় মারা যাবে না, এই দর্শন কুমুদিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মেনে চলছে। সম্মানের সঙ্গে যেন নতুন এই কর্মসূচির বিস্তার ঘটে, সে জন্য সবার সহযোগিতার কামনা করেন তিনি।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের না শেখালে, না জানালে, না বোঝালে প্রশমন সেবা দেওয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, এটা একক কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ না। এই কাজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সবাই মিলে করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতি সাহা, কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল হালিম ও কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক পি কে রায়।
কর্মশালা শুরু করা হয় ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ রবীন্দ্রসংগীতের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা বলেন, ‘আমরা নতুন আঙ্গিকে এই কর্মসূচি শুরু করছি। এই কর্মসূচির পদ্ধতিগতভাবে যেন অটুট থাকে, সে ব্যাপারে আমরা যত্নবান থাকব। এই কর্মসূচি আমরা হাসপাতালের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখব না।