পিলখানা হত্যাকাণ্ড: শেখ হাসিনা-মইন ইউসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘটনায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ অভিযোগ জমা দেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। ওই সময় বিদ্রোহী জওয়ানদের হামলায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা।
আজ অভিযোগ দাখিলের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এই সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের আইনজীবী তাসমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পিলখানার ঘটনার সময় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে যে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর দোসররা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলতে এবং স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করতে দুটি বড় আর শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে এ গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।
এ আইনজীবী বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের খুন করা হয়েছে। তাঁদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে। বেয়নেট নিয়ে খুঁচিয়ে লাশ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। যা গণহত্যা হিসেবেও পরিগণিত হবে।
৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে জানিয়ে তাসমিরুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক, সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, আইনমন্ত্রী এবং তখনকার বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান এবং যাঁরা এ হত্যাকাণ্ড এড়াতে পারতেন; কিন্তু করেননি এমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অভিযোগ দিতে যাওয়া নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা। কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিন ফেরদৌসী বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটিকে বিদ্রোহ বলবেন না। যারা পরিকল্পনা করে মেরে পোড়ানোর ব্যবস্থা করে, বেয়নেট দিয়ে খোঁচায়, ড্রেনে ফেলে, পরিবারদের-বাচ্চাদের বুট দিয়ে লাথি দিতে দিতে নিয়ে যায়। এমন অনেক কিছুই জানেন না, যেটা আমাদের সঙ্গে হয়েছে। এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই বলতে হবে।’ তিনি এ ঘটনার পুনরায় তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান।
নিহত কর্নেল কুদরত এলাহীর সন্তান আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, ‘আমি আইনজীবী হয়েছি, আইন পড়েছি একমাত্র বাবার হত্যার বিচার চাইতে। আমাদের বাবার হত্যার বিচার করে ছাড়ব। আমরা আশাবাদী—সঠিক বিচার পাব।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভুইয়া বলেন, ‘বাবা-মাকে (নাজনীন আহমেদ) কীভাবে মেরেছে, বলতে আমার বুকটা ফেটে যায়। আমাকে কর্মকর্তারা বলেছিলেন—বাবা, তুমি তোমার বাবা–মার লাশ দেখো না, নিতে পারবা না। আমি লাশ দেখতেই পারি নাই। এই নির্মমতা, বর্বরতা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। একটাই অপরাধ ছিল তাদের, তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসত। বাইরের শত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করত। বিশ্বাস আছে, বিজয় হবেই।’
নিহত মেজর তামজিদ হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে আমার স্বামীর লাশ পাওয়া যায়নি। চারবার ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে। ১০ মাস পর একজনের লাশ দেওয়া হয়। মিথ্যা কবর দেওয়া হয়েছে। আমি যতবার এর জন্য প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি, আমাকে বলা হয়েছে, আমার স্বামীকে দেশদ্রোহী করা হবে।’