কনডেমড সেলে মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুটি সব সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছে

শিশুটিকে কীভাবে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের পাঠানো একটি প্রতিবেদন আজ হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছেফাইল ছবি

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এক নারী ও তাঁর সঙ্গে থাকা ১১ মাস ১৩ দিন বয়সী কন্যাশিশুকে নিয়ম অনুসারে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা ও দৈনন্দিন খাবারসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ রোববার ওই প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন রেখেছেন।

গত ৩০ নভেম্বর ‘ফাঁসির সেলে কেমন আছে ১০ মাসের মাহিদা’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, হবিগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় মায়ের মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় তাঁর সঙ্গেই ফাঁসির সেলে আছে ১০ মাসের শিশু মাহিদা। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে শিশুটির জন্য পর্যাপ্ত খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিতে নির্দেশনা চেয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কনডেমড সেলে শিশুটির খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক ও হবিগঞ্জের কারা কর্তৃপক্ষকে ১৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে।

কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনের তথ্য আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। রিটের পক্ষে ছিলেন আবেদনকারী তানভীর আহমেদ।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুসহ ওই নারী প্রথমে হবিগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। এখন সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়েছে। হলফনামা করে কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। আদালত আগামী রোববার শুনানির জন্য দিন রেখেছেন।’

যেসব সুবিধা পাচ্ছে শিশুটি
গত ৯ ডিসেম্বর মা ও শিশুটিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে হবিগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।    

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া নারী বন্দীদের অন্য বন্দীদের থেকে আলাদাভাবে নারী বন্দী ভবন এলাকায় অবস্থিত ৪৫ বাই ২২ ফুটের একটি ওয়ার্ডে, ১৩ বাই ১১ ফুটের তিনটি টয়লেটসহ ওয়াশরুম, ৬টি সিলিং ফ্যান, ৮টি লাইট, ১টি দরজা, ৬টি জানালা এবং ১০ বাই ৫ ফুটের একটি বারান্দাবিশিষ্ট পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ–সংবলিত ওয়ার্ডে তাঁদের আটক রাখা হয়।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বন্দীর শিশুসহ অন্য নারী বন্দীর সঙ্গে কারাগারে থাকা শিশুদের জন্য ৪৫ বাই ২২ ফুটের একটি কক্ষকে খেলনাসহ শিক্ষণীয় প্রয়োজনীয় সব জিনিস স্থাপনের মাধ্যমে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু আছে। যাতে নারী বন্দীদের সঙ্গে থাকা শিশুরা খেলাধুলা করা ও শিশুশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। তা ছাড়া মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের (৬ বছর পর্যন্ত) নিয়মিত খিচুড়ি, ডিম, দুধ ও কলা সরবরাহ করা হয়। দুগ্ধজাত শিশুকে মশা-মাছির হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ছোট মশারি সরবরাহ করা হয়।

এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের প্রয়োজনীয় পোশাক, নতুন নতুন খেলনা ও লেখাপড়ার সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এমনকি বিভিন্ন দিবসে শিশুদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ও দিবসের তাৎপর্য অনুযায়ী নতুন পোশাক, খেলনা, কেকসহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করা হয়।

প্রতিবেদনে শিশুটির সম্পর্কে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া নারী বন্দী ও তাঁর সঙ্গে থাকা ১১ মাস ১৩ দিন বয়সী কন্যাশিশু সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্ণিত সব সুযোগ–সুবিধা ভোগ করছেন এবং তাঁদের দৈনন্দিন খাবার সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।