গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের দায়িত্বে পরিবর্তন, প্রজ্ঞাপন জারি
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনে পরিবর্তন এনেছে সরকার। এ বিষয়ে রোববার নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৭ আগস্ট ওই কমিশন গঠন এবং এর উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। নতুন প্রজ্ঞাপন জারির পর আগেরটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপনে কমিশনে সদস্যে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের প্রজ্ঞাপনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশনের অন্যরা ছিলেন—হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন। এবারও তাঁদের কমিশনে রাখা হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপনে কমিশনের তদন্তের জন্য গুমের ঘটনার বিবেচ্য সময় বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনা কমিশনের তদন্তের জন্য বিবেচনায় আনা যাবে। এর আগের প্রজ্ঞাপনে সময়টি ছিল ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। নতুন প্রজ্ঞাপনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে তিন মাস সময় দিয়েছে সরকার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর লাশ উদ্ধার বা নিখোঁজের ঘটনাগুলো আলোচনায় ছিল। এ সময় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন, গোপন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনাগুলোও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
নতুন প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে
রোববারের প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক “আয়নাঘর” বা যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যাদি’ সম্পাদন।
এর আগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপনে তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে—২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাঁদের শনাক্ত করা, কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করা এবং সে উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। এ ছাড়া গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। এ ক্ষেত্রে সুপারিশও করতে পারবে কমিশন।
প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধিতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে জানানো, গুমের ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা, গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা এবং গুমের ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশের কথা বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শন এবং যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা দেবে, কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করবে এবং কমিশনকে সহায়তার জন্য প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে। কমিশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক এবং কমিশনের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের মর্যাদা এবং সুবিধা ভোগ করবেন।