সচেতনতা ও বিনিয়োগ অক্সিজেনের ঘাটতি কমিয়ে বহু মৃত্যু ঠেকাতে পারে

যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তৃতীয় দিনের মূল প্ল্যানারি অধিবেশনে বক্তব্য দেন অক্সিজেনবিষয়ক ল্যানসেট কমিশনের সদস্য স্টিফেন হো। বালি, ইন্দোনেশিয়া, ১৪ নভেম্বরছবি: প্রথম আলো

অক্সিজেনের প্রয়োজন এখন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মতো। বহু মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। সচেতনতা ও বিনিয়োগ অক্সিজেনের ঘাটতি কমিয়ে বহু মৃত্যু ঠেকাতে পারে।

যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মূল প্ল্যানারি অধিবেশনে এভাবেই অক্সিজেনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে পাঁচ দিনের এই সম্মেলন গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বের তিন হাজারের বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

অক্সিজেনবিষয়ক ল্যানসেট কমিশনের সদস্য স্টিফেন হো আজ প্ল্যানারি অধিবেশনে বলেন, প্রতিবছর বিশ্বের হাসপাতালগুলোতে ৩৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এদের ৮০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। এসব মানুষের ৭০ শতাংশ প্রয়োজনের সময় অক্সিজেন পায় না। তিনি বলেন, কোভিড মহামারির সময় মানুষ অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। আর একটি মহামারির আগে অক্সিজেনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে।

স্টিফেন হো বলেন, অক্সিজেনের ঘাটতি হলে শরীরে শক্তি কমে যায়, কোষ কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে, একসময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে পড়ে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা এ সমস্যায় পড়ে। অনেকেই তা বুঝতে পারে না। আবার বুঝতে পারলেও অনেক হাসপাতালে কৃত্রিম বা মেডিকেল অক্সিজেন থাকে না। এটার গুরুত্ব ওষুধের মতোই। এটা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ।

এই প্ল্যানারি অধিবেশনটি ছিল শিশুদের নিউমোনিয়া চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। নির্ধারিত আলোচক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিউমোনিয়া বিশেষজ্ঞ ইয়াসির বিন নাসের বলেন, সারা বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। ভারত, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও চীনে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেশি। সারা বিশ্বে নিউমোনিয়ার প্রকোপ কমছে। তবে ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে অগ্রগতি দেখা গেছে, তার তুলনায় ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের অগ্রগতি কম।

উপসর্গহীন যক্ষ্মা

একটি অধিবেশনে ছিল উপসর্গহীন যক্ষ্মা নিয়ে। এই অধিবেশনের নির্ধারিত সময়ের আগেই হল মানুষে ভর্তি হয়ে যায়। অধিবেশনে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা বলেন, যক্ষ্মার যা সাধারণ লক্ষ্মণ বা উপসর্গ ছাড়াই অনেকে যক্ষ্মা বয়ে বেড়াচ্ছে। দুই সপ্তাহের বেশি কাশি ছিল না, ওজন কমেনি কিন্তু ফুসফুস অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে। এক্স-রেতে তা ধরা পড়ছে। শুধু ঘটনার উদাহরণ নয়, গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে।

অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাইজেরিয়ার চিকিৎসক এনাং ওয়ামা। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে নিজ দেশে কাজ করছেন। এনাং ওয়ামা প্রথম আলোকে বলেন, উপসর্গহীন যক্ষ্মা মানুষের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে আসছে। উপসর্গ না থাকলে, কাশি না থাকলে মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাবে না, পরীক্ষা করাবে না। অজান্তে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

আজ ওষুধপ্রতিরোধী যক্ষ্মা এবং যক্ষ্মা শনাক্তের গবেষণা ফলাফল নিয়েও একাধিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরও পড়ুন