হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর ভিড়, বেশির ভাগই শিশু

হাসপাতালের ভেতরে ডায়রিয়া রোগীদের ভিড়। আজ রোববার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

১০ মাস বয়সের আদিবা ডায়রিয়া আক্রান্ত পাঁচ দিন ধরে। দুই দিন ধরে ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। অসুস্থ শিশুটি ঠিকমতো ঘাড়ও নাড়াতে পারছিল না। তাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে নানি বসে আছেন। আর শিশুটির মা শারমিন আক্তার দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্যালাইন হাতে।

আজ রোববার বিকেলে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। শিশু আদিবার বাড়ি নোয়াখালী পৌরসভার সফিপুর এলাকায়। তার মা শারমিন আক্তার বলেন, স্যালাইন টাঙানোর কোনো স্ট্যান্ড নেই। তাই কয়েক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি জানালেন, পাঁচ দিন আগে মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। সঙ্গে জ্বরও রয়েছে। প্রথম তিন দিন বাড়িতে চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাইয়েছেন। সুস্থ না হওয়ায় উপায় না দেখে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতাল থেকে কেবল একটি স্যালাইন দিয়েছে। বাকি সব ওষুধ তাঁরা বাইরে থেকে কিনে এনেছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়—কক্ষ, মেঝে ও করিডরে রোগীদের ভিড়। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই শিশু। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অস্থায়ী ওয়ার্ড খোলা হয়েছে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে। সেখানে কোনো শয্যা নেই। মেঝেতে শয্যা পেতে চলছে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা। কোনো কোনো শয্যায় একসঙ্গে দুজন রোগীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে আধা ঘণ্টা অবস্থানকালে সাত-আটজন ডায়রিয়া আক্রান্ত নতুন রোগী আসতে দেখা যায়।

হাসপাতালে কথা হয় আছমা আক্তার নামের আরেক নারীর সঙ্গে। ৯ মাসের শিশু হাফছা আক্তারকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। তিনি বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর মেয়েকেও ভর্তি করিয়েছেন দুই দিন আগে। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে তাঁকে স্যালাইনও দেয়নি। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে এনেছেন।

সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের মনপুরা গ্রামের আবদল্লা আল মামুন হাসপাতালে এসেছেন তাঁর মেয়ে ফাতেমাকে (৮ মাস) নিয়ে। তিনি বলেন, ডায়রিয়ার কারণে মেয়েটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৬১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৫১ জন। রোগীদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়া, পেটব্যথাসহ শিশুদের নানা ধরনের রোগ হচ্ছে।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ অনেক বেশি। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশির ভাগই শিশু। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট রয়েছে। এরপরও সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।