বাঙালির দুই শ বছরের ভাবনার প্রকাশ
১৬টি বিষয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে দুই শতাধিক খণ্ডে। প্রথম পর্বে ৫টি বিষয়ের সব কটি খণ্ড প্রকাশিত হলো।
দুই শ বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মনীষীদের নির্বাচিত রচনা নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’। বিপুল এই আয়োজন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গত দুই যুগের প্রয়াসের ফল। ১৬টি বিষয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে দুই শতাধিক খণ্ডে। এর মধ্যে প্রথম পর্বে ইতিহাসচিন্তা, দর্শনচিন্তা, নারীচিন্তা, বিজ্ঞানচিন্তা ও সংস্কৃতিচিন্তা, মোট ৫টি বিষয়ের সব কটি খণ্ড প্রকাশিত হলো।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কার্যালয়ে মোড়ক উন্মোচন হয় এই চিন্তামূলক রচনাসংগ্রহের। বিভিন্ন বিষয়ের সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহমালার উদ্বোধন করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি এবং গ্রন্থমালার সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
এর আগে বিপুল আকারের এই কাজের প্রস্তুতি এবং গুরুত্ব নিয়ে দীর্ঘ পথপরিক্রমার স্মৃতিচারণা করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। দুই শ বছর সময়কাল নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এই সময়কালে বাঙালির শক্তির স্ফুরণ ঘটেছে। দুই শ বছর ধরে ছিল বাঙালি জাতির জীবনে এক অভাবনীয় বিকাশ ও সমৃদ্ধির যুগ। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনের বহুতর উত্থান-পতনের পাশাপাশি তার চিন্তা, ভাবনা ও মননজগতেও দেখা দিয়েছিল এক অনন্যসাধারণ প্রাচুর্য। মনীষীরা জীবন ও জগতের বিচিত্র বিষয় নিয়ে যে শুধু গভীর চিন্তা করেছেন, তা-ই নয়, তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভাবনার খোরাক হিসেবে লিখিতভাবেও রেখে গেছেন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, তর্ক থাকতে পারে, কিন্তু ইউরোপের বাইরে যদি রেনেসাঁ কোথাও হয়ে থাকে, তবে তা বাংলাতেই হয়েছে। রাজা রামমোহন রায় থেকে একে একে এসেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মনীষীরা। তাই এ সময়ের কাজগুলোকে গুছিয়ে রাখাটা খুব প্রয়োজন ছিল। এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জয়দেব বা চৈতন্যের মতো বিশ্বভারতীয় প্রতিভাদের কথা। মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে পাঠ করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন বলেন, গ্রেট বুকসের ৬০ খণ্ড ছাড়া ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’–এর মতো এত বড় সংকলন আর কখনো কোথাও হয়েছে কি না, জানা নেই। তিনি জানান, দুই শতাধিক গ্রন্থের এই ৭৪ হাজার পৃষ্ঠার মধ্যে সাযুজ্য রাখাই খুব কঠিন কাজ ছিল।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারগুলো থেকে এই বইগুলো সংগ্রহ করা হলে ছাত্র-শিক্ষক সবাই উপকৃত হবেন।
অর্থনীতিচিন্তা বিষয়ের সম্পাদক হারাধন গাঙ্গুলি বলেন, অর্থনীতি একটি চলমান ধারা, তাই দুই শ বছরের গুরুত্বপূর্ণ এই ভাবনাগুলো সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। দর্শনচিন্তার সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাঙালি, বাংলাকে জানতে চাইলে দর্শন নিয়ে যে খণ্ডগুলো প্রকাশিত হয়েছে, এর সব কটিই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশচিন্তার সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বললেন, মানুষের সঙ্গে তার চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সম্পর্ক সৃষ্টির শুরু থেকে। তাই ‘পরিবেশ আন্দোলন’ বর্তমান প্রজন্মের শব্দ হলেও মানুষ ও পরিবেশ চিরকালীন ভাবনা।
বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ সম্পাদনা করেছেন মোট ২২ জন সম্পাদক। এর মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন দুজন। বাঙালির চলচ্চিত্রচিন্তার সম্পাদক সাজেদুল আউয়াল এবং বাঙালির সংগীতচিন্তার সম্পাদক করুণাময় গোস্বামীর স্মৃতিচারণা করা হয় অনুষ্ঠানে।
লেখক, গবেষক মোহাম্মদ আবদুল হাই, অধ্যাপক মো. মোফাখ্খারুল ইসলাম, অধ্যাপক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন এবং লেখক শোয়াইব জিবরান তাঁদের সম্পাদনার অভিজ্ঞতা এবং সেই বিষয়ের গুরুত্বের তাৎপর্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম এই বিপুল কাজের জন্য আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ছিল সংগীত পরিবেশনা।
১৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও সাহিত্য ৩২ খণ্ড করে মোট ৬৪টি, ধর্ম ও দর্শনচিন্তা ২০ খণ্ড করে মোট ৪০টি বই। অন্যান্য ১২টি বিষয়ে প্রকাশিত হচ্ছে ১০১টি গ্রন্থ। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সব কটি খণ্ড প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
মোড়ক উন্মোচনের আগে বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ উপলক্ষে তৈরি ওয়েবসাইটটির লিংক প্রকাশ করা হয়। এখান থেকে প্রি অর্ডারে কেনা যাবে বইগুলো।
দুই শতাধিক খণ্ডের ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’ পুরো সেটটির মূল্য ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। তবে এখনই অর্ডার করে রাখলে সর্বোচ্চ ছাড়ে ৯০ হাজার টাকায় কেনা যাবে মূল্যবান এ সংগ্রহ।