এমাজউদ্দীন আহমদ সর্বজনগ্রহণযোগ্য পণ্ডিত ছিলেন

রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার স্মারক বক্তৃতা আয়োজন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে তাঁর সততার জন্য সবাই শ্রদ্ধা করতেন। তিনি সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। সবার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য পণ্ডিত ছিলেন তিনি।

বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মারক বক্তৃতায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হাকিম।

১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদ।

স্মারক বক্তৃতায় মোহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদ সত্যবাদী ও নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন। হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগরও ছিলেন তিনি।

এমাজউদ্দীন আহমদ কোনো ঘরানার মানুষ ছিলেন না উল্লেখ করে আবদুল হাকিম বলেন, তিনি সব সময় সত্য কথা বলতেন। কারও পছন্দ হোক বা না হোক, সত্য কথা বলে যেতেন। ছিলেন বড়মাপের বুদ্ধিজীবী।

এমাজউদ্দীন আহমদের ছাত্র ও ঘনিষ্ঠজন আবদুল হাকিম বলেন, তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন। তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা–সম্মান করতেন। এমাজউদ্দীন তাঁর জীবদ্দশায় ৩৯টি বই লিখেছেন। এর মধ্যে ৩০টি বাংলা ভাষায় ও ৯টি ইংরেজি ভাষায়। তিনি ১৫০টির বেশি প্রবন্ধ লিখেছেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই করেছেন বিরোধী দলের পাশে থেকে, সেই চেতনা যদি দেশের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবীর থাকত, তবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হতো না, চব্বিশে এত রক্ত দিতে হতো না। তাঁকে স্মরণ করতে চাইলে আমাদের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’

এমাজউদ্দীন আহমদ শিক্ষকদের শিক্ষণীয় শিক্ষক ছিলেন বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন এমাজউদ্দীন আহমেদ রিসার্চ সেন্টারের সংগঠক আবুল কাসেম হায়দার।

সভাপতির বক্তব্য এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদ কোনো দল, গোষ্ঠী বা পক্ষের রাজনীতি করেননি। তিনি ছিলেন স্বকীয় ধারায় দেশপ্রেমসঞ্জাত একজন বুদ্ধিজীবী; যিনি গণতন্ত্রকে একটি জাতির জীবনকাঠি মনে করতেন। তাঁর এ স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। তাঁর বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে এবং তাঁর পরিবার অন্যায় ও অনাচারের শিকার হয়েছে।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের মতো নিবেদিতপ্রাণ অনির্বাণ হয়ে বাতিঘরের মতো এ জাতিকে চিরকাল পথ প্রদর্শন করবেন বলে উল্লেখ করেন আবদুল লতিফ মাসুম। বলেন, ‘গণতন্ত্রের বাংলাদেশে জাতিরাষ্ট্রের এই সময়ে তাঁকে খুব প্রয়োজন ছিল।’

স্মারক বক্তৃতার সঞ্চালনায় ছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদের কন্যা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজম সওদাগর, সাংবাদিক নেতা কবি আবদুল হাই শিকদার, এমাজউদ্দীন আহমদের ছেলে জিয়া হাসান প্রমুখ।