ব্যাংক খাতের দুর্নীতি নিয়ে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’–এর মতো প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো সবার চোখ খুলে দিয়েছে। এভাবে নানা অসংগতির তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ইতিবাচক খবর পরিবেশন করে আশা বাঁচিয়ে রাখে প্রথম আলো। এ জন্য পত্রিকাটির প্রতি পাঠকের প্রত্যাশাও বেশি।
চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় সুধী সমাবেশে বক্তারা প্রথম আলো সম্পর্কে এভাবে তাঁদের মত ব্যক্ত করেন। প্রথম আলোর ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই সুধী সমাবেশে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংস্কৃতিকর্মী, তরুণ উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পী শ্রেয়সী রায়ের রবীন্দ্রসংগীত ও রাশেদ হাসানের আবৃত্তি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মনজুরুল হক। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো তরুণদের উৎসাহিত করে। আমার ব্যবসায়িক সাফল্যের পেছনে পত্রিকাটির অবদান রয়েছে। এখানে গ্রামের খবর, ইতিবাচক, খেলাধুলা, বিনোদনসহ সব সংবাদই পাওয়া যায়। এ ছাড়া সাংবাদিকতার একটা মান নির্ধারণ করেছে প্রথম আলো।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগেভাগে খবর পেলেও প্রথম আলোর কাছ থেকে সত্য তথ্য পান উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মল্লিকা রায় বলেন, আজকাল কিছু সাংবাদিক অনেক সময় তথ্যদাতার মাধ্যমে পাওয়া খবর যাচাই না করে ছেপে দেন। কিন্তু প্রথম আলো সেদিক থেকে আলাদা।
সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদপত্র জনগণকে অনেক তথ্যমূলক সংবাদ দেয়। আবার জনগণও সংবাদপত্রকে তথ্য দেয়। আমরা নির্ভর করতে পারি, আস্থা রাখতে পারি, যদি কোনো সংবাদপত্র জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। প্রথম আলো থেকে ইতিমধ্যে দায়বদ্ধতার জায়গাটি আমরা পেয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য পর্বের ফাঁকে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। তিনি সত্য প্রকাশে অবিচল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক চট্টগ্রামকে এই দেশের সভ্যতার তীর্থস্থান উল্লেখ করে বলেন, শুরু থেকে চট্টগ্রামবাসী প্রথম আলোর সঙ্গে ছিলেন, আছেন। প্রথম দিন থেকে প্রথম আলোকে চট্টগ্রামে ১ নম্বর কাগজের ভালোবাসা দিয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। প্রথম আলো আশার কথা বলতে চায়। একটি জাতি আশার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, প্রথম আলো প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে মানুষের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। কোনো পত্রিকা মানুষের মননে আলোড়ন সৃষ্টি করতে না পারলে তা অর্থহীন হয়ে যায়।
প্রথম আলোর ভূমিকা আজ সর্বমহলে প্রশংসিত উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল বলেন, ‘বিনি সুতোর মালার মতো ২৪ বছর ধরে আমরা প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছি। আমরা প্রথম আলোর শুভানুধ্যায়ী।’
ছাপা কাগজে চট্টগ্রামের খবরের জন্য ঢাকা সংস্করণেও আলাদা জায়গা দেওয়ার কথা বলেন ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান।
বক্তব্যের পর পাঠকের প্রশ্নের মুখোমুখি হন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চট্টগ্রামের বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার ও চট্টগ্রামের হেড অব নিউজ আশরাফ উল্লাহ। পাঠকেরা প্রথম আলোর নীতি, বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনা, নারী অধিকার নিয়ে ভূমিকাসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ ছাড়া আঞ্চলিক ক্রোড়পত্র ‘আমার চট্টগ্রাম’ প্রকাশের বিষয়েও জানতে চান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষ, শিশুস্বাস্থ্য–বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী, জিপিএইচ ইস্পাতের মিডিয়া উপদেষ্টা অভীক ওসমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ডিন সুনীল ধর, চুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বশির জিসান, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম, বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম শামসুজ্জামান, চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষ হয় সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের নিয়ে নির্মিত প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্র সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে–এর প্রদর্শনীর মাধ্যমে।