রামপাল-রূপপুরের মতো চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে: আনু মুহাম্মদ

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদছবি: প্রথম আলো

রামপাল-রূপপুরের মতো ‘সর্বনাশা’ চুক্তিগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। পাশাপাশি গত ১৫ বছর এসব চুক্তি যাঁরা করেছেন, তাঁদের (জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং পরামর্শক) অপরাধ শনাক্ত করে বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কোনো চুক্তি করা যাবে না। রামপাল-রূপপুরের মতো দেশের জন্য ভয়াবহ প্রকল্পগুলো বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। জাতীয় কমিটি ২০১৭ সালে জ্বালানি ও বিদ্যুতের যে মহাপরিকল্পনা করেছিল, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জাতীয় কমিটির সাবেক এই সদস্যসচিব অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে (আওয়ামী লীগ সরকার) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বেশ কিছু সর্বনাশা চুক্তি করেছে। দেশের কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুবিধা ও অন্য দেশকে খুশি করতে এসব চুক্তি হয়েছে। আর এসব চুক্তির সুবাদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। অথচ নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে মনোযোগ দেয়নি।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সমাবেশে করে
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া সুন্দরবন ধ্বংস করে ভারতের সঙ্গে রামপাল, চীনকে খুশি করে পায়রা-বাঁশখালী, রাশিয়াকে খুশি করে দেশের জন্য ভয়ংকর রূপপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে গ্যাস খাতে বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন আনু মুহাম্মদ।

দেশে যে গ্যাস আছে, সেগুলো অনুসন্ধানে বাপেক্সকে সক্রিয় করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস তুললে গ্যাসের সংকট কেটে যাবে। গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ জাতীয় সংস্থার হাতে রাখতে হবে। তাহলে অনেক কম দামে গ্যাস এবং সেই গ্যাস থেকে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

তবে এই সরকারও আবার বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির তৎপরতা শুরু করেছে জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সমাবেশ থেকে বলতে চাই, দেশের গ্যাসক্ষেত্র কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়া যাবে না। বিদেশি কোম্পানির হাতে দিলে দেশের ক্ষতি হয়, ঋণ হয়, অনিশ্চয়তা থাকে, দেশের মানুষের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়।’

সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা উত্তরের সভাপতি সাজেদুল হক বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলসহ দীর্ঘদিন ধরে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নানা চুক্তি করেছে। দেশ ও গণবিরোধী এসব চুক্তি বাতিল করতে হবে। জ্বালানি খাতসহ বিদ্যুৎ খাতের অরাজকতার দায় শাসক দলের ভুলনীতি ও দুর্নীতি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ জাসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, গত সরকার যে অবস্থায় রেখে গেছে, সে অবস্থায় চলতে দেওয়া যায় না। যারা এসব দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির ঢাকা মহানগরের অন্যতম সদস্য খান আসাদুজ্জামান। বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খালেকুজ্জামান লিপনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির নেতা মীর মোফাজ্জল হোসেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রায়হান উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বিপ্লব শীল ও চারু সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।