‘সাজানো সংসার ভেঙে গেল, সন্তানদের কী বলে বুঝ দেব’

বড় মেয়ে সাদিয়া আফরোজের জন্মদিনে এমদাদুল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

মাত্র তিন দিনের ব্যবধান। এর মধ্যেই ওলটপালট হয়ে গেল পুলিশ সদস্য এমদাদুল হোসেনের সংসার। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আজ সোমবার মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তিন সন্তানকে নিয়ে এখন দিশাহারা এমদাদুলের স্ত্রী শারমিন আক্তার। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে, এখন সেই প্রশ্ন তাঁর।

এমদাদুল হোসেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশে যোগ দেন তিনি। পরিবার নিয়ে নগরের বিআরটিসি নতুন পাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে দেড় বছর বয়সী যমজ দুই সন্তান সাইদুল ইসলাম ও সারিকা আফরোজ। আর বড় মেয়ে সাদিয়া আফরোজের বয়স পাঁচ বছর।

পুলিশ বলছে, গত শুক্রবার অসুস্থতা বোধ করলে এমদাদুল নগরের দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে যান। শনিবার তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে ছিলেন। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন আবার পুলিশ হাসপাতালে যান তিনি। পরে সেখান থেকে তাঁকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালেই আজ দুপুরে মৃত্যু হয়েছে এমদাদুলের।

কনস্টেবল এমদাদুলের গ্রামের বাড়ি সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় এমদাদুলের স্ত্রী শারমিন আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যমজ দুই সন্তানের বাবা ডাক শোনার আগেই স্বামী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। কীভাবে কী হলো বুঝতে পারছি না। মাত্র তিন দিনের মধ্যে সাজানো সংসার ভেঙে গেল।’

আরও পড়ুন
পুলিশ কনস্টেবল এমদাদুল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শারমিন। বলেন, ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করায় পুলিশ হাসপাতালে যান এমদাদুল। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিশ্রামেও থাকেন। এরপরও স্বামীকে হারাতে হলো। ছোট তিন সন্তানকে কী বলে বুঝ দেব? তাদের নিয়ে সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করব?’

বাবার মৃত্যুর বিষয়টি যমজ দুই সন্তান সাইদুল ও সারিকা বুঝতে না পারলেও বাসায় লোকজন দেখে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে পাঁচ বছর বয়সী সাদিয়া আফরোজ। মুঠোফোনে সে প্রথম আলোকে বলে, তার বাবাকে সাদা কাপড় পরিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকবার ডাকার পরও কোনো সাড়া দেয়নি বাবা।  

তিন সন্তানকে নিয়ে এমদাদুলের অনেক স্বপ্ন ছিল বলে জানান তাঁর শ্যালক মো. ফারুক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর বোনের সাজানো সংসার ছিল। সবাই হাসিখুশি থাকত। তিন সন্তানকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল এমদাদুলের। সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই ডেঙ্গু সব শেষ করে দিল। এখন চিন্তা, সন্তানদের নিয়ে তাঁর বোন সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবেন।

আরও পড়ুন

এদিকে এমদাদুলের মৃত্যুতে তাঁর সহকর্মীদের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে আসে। নগর পুলিশের উপকমিশনার ট্রাফিক (উত্তর) জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক উত্তর বিভাগে রেকার অপারেটর ছিলেন এমদাদুল। তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মাত্র তিন দিনের মধ্যে তাঁর চলে যাওয়াটা ‘অবিশ্বাস্য’।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ জন।

আরও পড়ুন