শিল্পীর রং–তুলিতে সুকুমার রায়ের জনপ্রিয় সব চরিত্র
কাঠ–বুড়ো, ট্যাশগরু, সৎপাত্র অথবা রামগরুড়ের ছানা—এসবই বিশ্বনন্দিত শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের তৈরি সাহিত্যকর্মের জনপ্রিয় সব চরিত্র। এসব চরিত্র এবার ধরা পড়েছে লাল–নীল রংয়ে। সুকুমার রায়ের শিশুতোষ গ্রন্থে স্থান পাওয়া লেখার সঙ্গে যে অলংকরণ, তাদের ভিন্নরূপে উপস্থাপন করেছেন ভারতীয় শিল্পী অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস।
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল আর্ট গ্যালারিতে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনীর। উদ্বোধন করেন শিল্পী ও অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক সুশান্ত কুমার অধিকারী, অধ্যাপক পরাগ রায়, অধ্যাপক মলয় চন্দন মুখোপাধ্যায়।
এই প্রদর্শনী সুকুমার রায়কে নতুনভাবে চেনাতে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার। কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য্য বলেন, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের প্রদর্শনীটি দেখা দরকার।
শিল্পী অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস বলেন, কথাও যে ছবি হতে পারে, তা–ই শিখিয়েছেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই প্রজন্মের অনেক শিশু–কিশোর তাঁকে চেনে না। একবিংশ শতকে সুস্থ থাকার জন্য সুকুমার রায়ের চর্চা বাড়ানো প্রয়োজন।
সুকুমার রায়ের শততম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এর আগে ছবিগুলো নিয়ে কলকাতার কালিগঞ্জের চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে দুই দিনের প্রদর্শনী হয়েছে।
জয়নুল আর্ট গ্যালারির প্রদর্শনীতে সাদা–কালো ছবিগুলোর স্বভাব আগের মতো বজায় রেখে শিল্পী যুক্ত করেছেন নিজের ভাবনা। কখনো ‘পাগলা বিশু’র গায়ে লাল ডোরা দাগের ফতুয়া আর আকাশি লুঙ্গি, কখনো ‘গানের গুঁতো’য় দুই সংগীতশিল্পীর পোশাক চেহারা—সবই হয়েছে সমকালীন। এমনকি সুকুমার রায় তাঁর লেখার সঙ্গে যে অলংকরণগুলো সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি, সেসব আঁকতে চেষ্টা করেছেন শিল্পী। যেমন চলচ্চিত্র চঞ্চরী, লক্ষ্মণের শক্তিশেল।
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ৩৯টি ছবির সবই রং–তুলিতে আঁকা। সূক্ষ্ম কাজের টান দেখে কলমের আঁচড় বলে মনে হয়, সেগুলোও শিল্পীর তুলি দিয়ে দেওয়া দাগ।
বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায় নিজের স্বল্পস্থায়ী জীবনেও দেখিয়ে গেছেন প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ। সন্দেশ–এর সম্পাদক থাকাকালীন তাঁর লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে।
সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালে। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি। সুকুমার রায়ের শততম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ প্রদর্শনী চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দর্শকের জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে রাত ৮টা পর্যন্ত।