ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সামনে লাল রঙের নোটিশ টানিয়ে দিন: বিআইপি
কোনো ভবনে প্রবেশের পর বোঝার উপায় থাকে না যে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কি না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সামনে অন্তত লাল রঙের নোটিশ টানিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নগর–পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কথা উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, সবাই সর্বোচ্চ মুনাফা চান। এ ক্ষেত্রে মানুষ মরল নাকি বাঁচল, এ নিয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবে চলতে পারে না। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড এবং ভবনে জীবনের নিরাপত্তা: বিআইপির পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা—শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত দিয়েছেন নগর–পরিকল্পনাবিদেরা। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে সংগঠনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পেশিশক্তির ব্যবহার করেই শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন নিয়েছিলেন বেইলি রোডের ওই ভবনের মালিক। পেশিশক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় শক্তির নমনীয় আচরণ বন্ধ করতে হবে।
যে উদ্দেশ্যে ভবন তৈরি করা হয়েছে, তা ওই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে ঢাকার সব ভবনের তথ্য অনলাইনে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চাইলে এই তথ্যগুলো এক মাসের মধ্যেই অনলাইনে আপলোড করে দিতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নিমতলী, চুড়িহাট্টা, বনানী এফআর টাওয়ার, মগবাজার, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বেইলি রোডের এই ঘটনা ঢাকায় জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আবার সবার সামনে নিয়ে এল। বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকার অবস্থান নিচের সারিতে—বিষয়টি বহুল আলোচিত। কিন্তু ঢাকায় যে পরিমাণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে বসবাস করতে হয়, বিশ্বের আর কোনো শহরে এমন ঝুঁকি আছে কি না, সেটা বিবেচনার দাবি রাখে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কঠোর সমালোচনা করে বিআইপির সভাপতি বলেন, বেইলি রোডের ভবনটিতে কার্যকর কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না। এ দুর্ঘটনার আগে ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবনের কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি ভবনমালিক ও ভবনের ব্যবহারকারীরা। বিপরীতে বারবার নোটিশ দিয়েই দায় সেরেছে ফায়ার সার্ভিস।
এ ঘটনায় রাষ্ট্রের নগর ও প্রশাসনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতিজনিত দায় রয়েছে বলেও মনে করেন আদিল মুহাম্মদ খান। নগর সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আদিল বলেন, রাজউক যে ভবনে কেবল অফিস করার অনুমতি দিয়েছে, সেই ভবনে সিটি করপোরেশন কীভাবে রেস্তোরাঁ করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। আবার ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন না নিয়েই কীভাবে এই রেস্তোরাঁর ব্যবসা চলছে, সেটাও বিস্ময়কর। নগর সংস্থাগুলোর কার্যকর সমন্বয়ের অভাবেই ভবনগুলোকে নিরাপদ করা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাবও তুলে ধরেছে বিআইপি। এর মধ্যে রয়েছে নগর–পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকা শহরের ভবনের সেটব্যাকের (এক ভবন থেকে অন্য ভবনের দূরত্ব) পরিমাণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে এবং নির্মাণবিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। ভবন রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনার অনুমোদন নিতে প্ল্যানিং অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, সহসভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, যুগ্ম সম্পাদক তামজিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মু. মোসলেহ উদ্দীন হাসান প্রমুখ।