দোকান দখল নিতে যুবলীগের হামলার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রেলওয়ে স্টেশনে একটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সোমবার সকালেছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনের একটি দোকানের দখল নিতে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. ইলিয়াছ ফারুক (৪০), মো. সুমন (২৯), মো. ইসতিয়াক আহমেদ (২২), মো. রাশেদ (৩০) ও মো. আবু তাহের (৫৫)। তাঁরা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারী।

ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল সোমবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন–সংলগ্ন ‘আপ্যায়ন’ নামের একটি খাবারের দোকান দখলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফ ও তাঁর ভাই ইকবালের লোকজন বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেন। সেখানে অবস্থানরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দোকানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নয়। এটি রেলওয়ের জায়গায়। দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গার নিয়ন্ত্রণ ছিল স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের হাতে। তবে ৫ আগস্টের পর এখানে নতুন করে দোকান দেন চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শেখ মাহদি হাসান।

দোকান করা নিয়ে হানিফ ও তাঁর অনুসারীর সঙ্গে মাদ্রাসাছাত্র মাহদি হাসানের বিবাদ হয়। এর জের ধরেই দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে হামলার সময় রটে যায় যে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। আর এলাকায় মাইকিং করে রটানো হয় যে জামায়াত–শিবিরের লোকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর হামলা করছে। এই নিয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পরে ওই ঘটনায় আপ্যায়নের মালিক শেখ মাহদি হাসান গতকাল রাতে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন। এতে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় গতকাল রাতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষায় কমিটি

এদিকে ক্যাম্পাস–সংলগ্ল রেলগেট এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় ৯ সদস্যের একটি কমিটি করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। এতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে এই কমিটি করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন স্থানীয় বাসিন্দা আহমদ মিয়া, মোহাম্মদ জাকারিয়া ও মোহাম্মদ সেকান্দর। কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তরের জাহিদ হাসান, রাফিউর রহমান, ইসলামিক অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের হাবিবুল্লাহ খালেদ, ইংরেজি বিভাগের ইসহাক ভূইয়া ও লোক প্রশাসন বিভাগের মোনায়েম শরীফ।

জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কোরবান আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘাতের স্থায়ী সমাধান করতে তাঁরা কাজ করবেন।