চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে আবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ
চায়ের দোকানে বসা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশ।
বিবদমান এ দুটি পক্ষ হচ্ছে সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। এর মধ্যে সিক্সটি নাইনের সদস্যরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সিএফসির সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
এর আগে আজ দুপুর ও গতকাল রাতে সিক্সটি নাইন ও বিজয় উপপক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাতে ছাত্রলীগের অন্তত ১৫ নেতা–কর্মী আহত হয়েছিলেন।
আজ রাতে সংঘর্ষের জন্য এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছে। সিএফসি উপপক্ষের নেতা–কর্মীদের দাবি, তাঁদের এক কর্মীকে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন এলাকায় একটি চায়ের দোকানে অতর্কিত হামলা করেন সিক্সটি নাইনের সদস্যরা। এর কিছুক্ষণ পর শাহজালাল হলের সামনে তাঁদের আরেক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা এসব হামলা প্রতিহত করেছেন।
অন্যদিকে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, তাঁদের এক কর্মী স্টেশন এলাকায় চায়ের দোকানে একটি চেয়ারে বসতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিতণ্ডায় জড়িয়ে ওই কর্মীকে মারধর করেছেন সিক্সটি নাইনের কর্মীরা। পরে তাঁরা তাঁদের প্রতিহত করেছেন।
রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, সিক্সটি নাইনের নেতা–কর্মীরা শাহজালাল হল ও সিএফসির নেতা–কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান করছেন। এ দুটি হল পাশাপাশি। উভয় পক্ষের নেতা–কর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ছিল। দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা শুরু থেকে থাকলেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন তাঁরা।
সংঘর্ষে ছাত্রলীগের আহত কর্মীদের মধ্যে সিক্সটি নাইনের দুজন আর বাকি সাতজন সিএফসির। সিক্সটি নাইনের কর্মীরা হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর সিএফসির কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, রাতে মারামারির ঘটনায় সাতজনকে তাঁরা চিকিৎসা দিয়েছেন। একজনের শরীরে কুপিয়ে জখমের চিহ্ন ছিল। আর বাকিদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইটপাটকেলের আঘাত লেগেছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সিএফসির নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে দুপুরে একটা ঝামেলা পার করেছেন। সংঘর্ষে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই ছিল না।
আর সিএফসির নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ প্রথম আলোকে বলেন, সিক্সটি নাইনের কর্মীদের ওপর কোনো নেতার নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের কর্মীকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাঁরা এটি প্রতিহত করেছেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রাত সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মামলা করে তাহলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে আ জ ম নাছিরের নয়টি আর বাকি দুটি পক্ষ মহিবুল হাসানের অনুসারী।